জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচন আজ। এবারও এক হতে পারেনি আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল। দুই ভাগে বিভক্ত দলের দুটি অংশ একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছেন। দীর্ঘদিন দুই ভাগ হয়ে দুটি কমিটিতে তাদের কর্মকাণ্ড চলছে।
বিভক্ত দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় নিজেদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে।
এদিকে গত ৮ বছর শিক্ষক সমিতির এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না সাদা দল। এ বছর তাদের অংশগ্রহণের গুঞ্জন থাকলেও শেষ মুহূর্তে আসেনি তারা। ফলে নীল দলের দুই গ্রুপের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হার-জিতের প্রভাবক হয়ে উঠেছে সাদা দল।
শিক্ষকদের এ নির্বাচনে ১৫টি পদের বিপরীতে লড়ছেন ৩০ শিক্ষক। তাদের মধ্যে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ পদে একজন করে নির্বাচিত হবেন এবং সদস্য পদে ১০ জন শিক্ষক নির্বাচিত হবেন। নীল দলের আইনুল-লুৎফর প্যানেলে সভাপতি পদে অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদকের পদে অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান। অপরপক্ষে সভাপতি পদে লড়ছেন অধ্যাপক ড. শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদকের পদে অধ্যাপক ড. জহির উদ্দীন আরিফ। শিক্ষকদের এ নির্বাচনে মোট ৬৭৫ জন শিক্ষক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এর মধ্যে দেশের বাইরে আছেন প্রায় একশ ভোটার।
জানা যায়, ২০১৪ সালে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় দেড়শ জন। এ সংখ্যা এখন প্রায় দুইশ বলে জানিয়েছেন সাদা দলের একাধিক সূত্র। সাদা দলের শিক্ষকরা প্রকাশ্যে কর্মসূচি ও নির্বাচনে অংশ না নিলেও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের বিভিন্ন কর্মসূচির পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন এমন অভিযোগও আছে। অতীতে সাদা দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এখন নীল দলে সঙ্গে আছেন অনেক শিক্ষক। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও আছে দু'পক্ষের।
সূত্র জানায়, গতানুগতিক ধারায় এবারের নির্বাচনেও সাদা দলের ভোটই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। হার-জিতের প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে সাদা দলের একাংশটি।
২০১৭ সালে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের দু’গ্রুপ পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠন করে। পরে আওয়ামীপন্থী কয়েকজন শিক্ষক গঠন করে ‘জয় বাংলা শিক্ষক সমাজ’। যার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস। এবার নির্বাচনে আসেনি এ দলটি। তবে আগামী নির্বাচন ঘিরে প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
নীল দলীয় শিক্ষকদের সঙ্গে সাদা দলের শিক্ষকদের বিভিন্ন যোগসূত্র থাকায় এ দলটি গঠন করেন বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ ঘটেছে নীল দলের আরেক অংশের শিক্ষকদের দল যার নাম ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজ।’ এতে নেতৃত্বে আছেন অধ্যাপক ড. হোসনে আরা জলি ও অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দীন। তবে নির্বাচনের অগ্রিম প্রস্তুতি থাকলেও প্যানেল ঘোষণা করেনি এ দলটি। আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন তারা।
জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্যানেল প্রকাশ করে অংশগ্রহণ করে সাদা দল। পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোণঠাসাসহ নানাবিধ কারণে নির্বাচনে আসেনি তারা। এবার অংশগ্রহণ করতে একাত্মতা পোষণ করলেও শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছে সাদা দল। এ নিয়ে চলছে শিক্ষকদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনা। অনেকের অভিযোগ, কোনো একটি পক্ষের সঙ্গে মিলে গিয়ে নির্বাচনে আসেনি তারা।
তবে বিষয়টি এমন না বলে জানান সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক রইছ উদদীন। তিনি বলেন, কিছু সমস্যার কারণে নির্বাচনে প্যানেল দেওয়া হয়নি।
এদিকে নীল দলে বিভক্তির বিষয়ে হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে নীল দলের শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও আলোচনায় বসা হয় না বলে জানান শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে নীল দলের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ড. নাফিস আহমেদ বলেন, ‘আমরা চাই নীল দলের একাত্মতা হোক। সবাই এক সঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা আছে কিন্তু আলোচনায় বসা হচ্ছে না বিভিন্ন কারণে।’
একই কথা বলেন নীল দলের আরেক অংশের সভাপতি অধ্যাপক ড. পরিমাল বালা। তিনি বলেন, মুজিব আদর্শের বিশ্বাসী আমরা সব সময় এক পক্ষে। আমাদেরও ইচ্ছা আছে এক হওয়ার। তবে কেউ একজন উদ্যোগ নিয়ে করতে হবে।
সার্বিক বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, নির্বাচনে সবার ভোটাধিকার আছে। নীল দল বা সাদা দল হিসেবে কোনো আলাদা নিয়ম নেই। নীল দলের দুটি প্যানেল থেকে নির্বাচন হবে এবারও।
-বাবু/এ.এস