ছয় স্তরের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে শুরু হচ্ছে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ জন্য সোমবার রংপুর পুলিশ লাইন্স মাঠ থেকে সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনসহ (ইভিএম) নির্বাচনি সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা কড়া পুলিশি পাহারায় নির্বাচনি সামগ্রী কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন।
নির্বাচনের জন্য ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনি মালামাল প্রিসাইডিং অফিসারসহ কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করার আগে রংপুর পুলিশ লাইন্স মাঠে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মীনা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ২২৯টি ভোট কেন্দ্রের সবকটিতেই সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহণসহ সার্বিক কার্যক্রম ঢাকা থেকে সরাসরি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনাররা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করবেন।’
তিনি বলেন, ‘রবিবার মধ্যরাত থেকে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় সব মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সোমবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনের দিন সব ধরনের যানবাহন এবং ইজিবাইক চলাচল বন্ধ থাকবে। নির্বাচনে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। র্যাব, বিজিবি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পুরো নির্বাচনি এলাকা নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রাখবে।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তারপরও যদি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় এবং যাদের জন্য নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
অন্যদিকে, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মীনা বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ছয় স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের পাশাপাশি স্পেশাল রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। সেগুলো রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। এর পাশাপাশি ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ ফোর্স নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন। এর বাইরে ১১টি বিজিবির টিম কাজ করবে। ১৬/১৭টি র্যাবের টিম থাকবে। ব্যাটালিয়ন আনসার ছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশের গোয়েন্দা টিম ও অন্যান্য গোয়েন্দারা কাজ করবে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট প্রদান দিতে পারেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সে ব্যবস্থা করবে।’
জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরসহ মোট প্রার্থী ২৫১ জন। এদের মধ্যে ৯ জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া ১১টি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬৮ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১৮৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মেয়র পদে প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা (বর্তমান মেয়র), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী লতিফুর রহমান মিলন (দল থেকে বহিষ্কৃত), ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল, জাসদের শফিউর রহমান, জাকের পার্টির আশরাফুল ইসলাম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আবু রায়হান, খেলাফতে মজলিসের তৌহিদুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি।
এই নির্বাচনে মোট ভোটার চার লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ১২ হাজার ৩০২ বাকি দুই লাখ ১৪ হাজার ৪৬৯ জন নারী ভোটার। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২২৯টি। মোট ওয়ার্ড ৩৩টি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে। সব কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হবে।
রংপুর সিটি করপোরেশন গঠনের পর ২০১২ সালে প্রথম নির্বাচন হয়। এই সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা দ্বিতীয় মেয়র নির্বাচিত হন। এবার এই সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন হবে।
বাবু/এসআর