মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫ ৯ বৈশাখ ১৪৩২
মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫
গোবিন্দগঞ্জে মাহফিলের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত: আবু ত্বহা
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ৫:১৭ PM
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ওয়াজ মাহফিলে হামলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী বক্তা আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান। সেই সাথে তার অফিসিয়াল ইউটিউবারদের ক্যামেরা চালু না করতে গলায় ছুরি ধরাসহ দুই সহকারীর ওপর হামলা করে ঘড়ি, নগদ ৩৬ হাজার টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। মাহফিল নিয়ে আয়োজক কমিটি যার সাথে মৌখিক চুক্তি করেছে ওই ব্যক্তির সাথে তার পরিচয় নেই, এমনকি মাহফিল সংক্রান্ত কোনো কথাও হয়নি। মাহফিলের দুইদিন আগে আয়োজকরা তার সাথে যোগাযোগ করে অনুরোধ করেন। সেদিন রাতে বগুড়ায় মাহফিল থাকায় সেখান যাওয়ার পথে মাগরিবের পর ওয়াজ করতে সম্মতি দেন আবু ত্বহা। 

উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নের মোকন্দপুর জামে মসজিদের উদ্যোগে আয়োজিত মাহফিলে ৩০ মিনিট ওয়াজ করার অভিযোগ নাকচ করে ত্বহা বলেন, ‘আমাদেরকে বলা হয়েছে যে আপনাদেরকে বাদ মাগরিব আলোচনা করতে হবে। আর আমরা গিয়ে উপস্থিত হয়েছি ৪টায়। গিয়ে শুনি, ৩টা থেকে আমার নামে মাহফিল প্রচার করা হয়েছে। তারপর তাড়াহুড়ো করে স্টেজে উঠানো হলো। অনলাইনে প্রচার করছে যে ৩০ মিনিট ওয়াজ করেছে; অথচ আমি নিজেই ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট বক্তব্য দিয়েছি।’

বক্তব্যের এক পর্যায়ে মাগরিবের নামাজের সময় হলে নামাজ শেষে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব করার ঘোষণা দেন এই বক্তা। কিন্তু সেসময় শাহীন নামের এক যুবক মঞ্চে উঠে তাকে আলোচনা চালিয়ে যাবার জন্য জোর করতে থাকেন। তিনি বলেন, শাহীন, যে কিনা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে মঞ্চে উঠে যাচ্ছে-তাই আচরণ করেছে। কথাবার্তার শ্রী এমন যে আপনাদের টাকা দিয়ে নিয়ে আসি- যতক্ষণ বলবো ততক্ষণ আলোচনা করতে হবে। দুই ঘণ্টা আলোচনা করতে হবে। আবদুল আলিমের মাধ্যমে আপনাকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। অথচ ওই মাধ্যমকে আমি চিনিই না। 

উপস্থিত জনগণ যখন দেখলো হট্টগোল লেগেছে তখন তারা নিরাপত্তা দিয়ে আমাদের গাড়িতে তুলে দেন। আমার সহকারী মুজাহিদ ও দুই ক্যামেরাম্যানকে বেধম পিটিয়েছে এবং ক্যামেরা ভাঙ্চুর করেছে। নগদ ৩৬ হাজার টাকা ছিনতাই করেছে। সেখান থেকে আমরা সরাসরি থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করি। এর পরের দিন আমার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলো। ভুক্তভোগী আমরা, মারও খেলাম আমরা এবং মামলা করার পরও আসামিদের বক্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদকে হলুদ সাংবাদিকতা মন্তব্য করে এই বক্তা বলেন, ‘একটা ন্যাশনাল নিউজ প্রচার করবেন বাদী-বিবাদী উভয়ের বক্তব্য নেওয়া দরকার আছে। যার নামে মামলা করেছি সে দাঁড়িয়ে বলছে যে ও (শাহীন) নাকি আমাদেরকে গাড়িতে তুলে দিয়েছে। অথচ ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ওই ছেলে আমার ছোট ভাইকে টানাহেচড়া করছে, গায়ে হাত তুলছে। এটা পুরোটাই হলুদ সাংবাদিকতা। যারা ভিকটিম তাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতা।’

তার অফিসিয়াল ইউটিউবারদের গলায় ছুরি ধরার অভিযোগ করে বলেন, ক্যামেরা সেট করতে না দিতে আমার দুই ইউটিউবারের গলায় ছুরি ধরেছে। একজনের গলায় কাপড় পেচিয়ে একদিকে নিয়ে গেছে। পুরোটা আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ছিল যে কিছু একটা ঘটবে। ক্যামেরা ভাঙ্চুর করা হয়েছে। কিন্তু সেদিন মঞ্চের সামনে কেন ক্যামেরা বসাতে দেওয়া হলো না?

এদিকে আয়োজকরা দাবি করছেন যে গত ৮ নভেম্বর ত্বহা ও তার সহকারী আবদুল আলিমের সঙ্গে মৌখিক চুক্তি হয় ওয়াজ করতে হবে দুই ঘণ্টা। ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ত্বহার ওয়াজ করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি পৌনে ৫টায় বক্তব্য শুরু করে সোয়া ৫টায় শেষ করে চলে যাচ্ছিলেন। সেসময় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে।

অন্যদিকে, ঘটনার এক মাস আগেও ইসলামী বক্তা আবু ত্বহা আদনান তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তিনটি অফিসিয়াল মোবাইল নাম্বার শেয়ার করেছেন। এ ব্যতীত তার অন্য কোন অফিসিয়াল নাম্বার নেই এবং সাধারণ মানুষকে প্রতারিত না হতে আহ্বানও জানান। এই বক্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন মাহফিলে বারবার বলছেন যে, মোকন্দপুরের মাহফিল কমিটি যার সাথে মাহফিল সংক্রান্ত মৌখিক চুক্তি করেছে তাকে (আবদুল আলিম) তিনি চেনেন না। মুজাহিদ, জহিরুল ও জাকারিয়া ব্যতীত তার কোন সহকারী নেই।

এর আগে ১৯ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ত্বহা ও তার দুই সহকারী মাওলানা মুজাহিদ এবং মাওলানা ফিরোজকে ঘিরে রেখেছেন মাহফিলে আগতরা। ত্বহার ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের পাশে কয়েকজন যুবক তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার চেষ্টা করছে এবং উপস্থিতরা ওই যুবকদের বাধা প্রদান করছে। একপর্যায়ে তারা মাওলানা মুজাহিদকে রাস্তায় টেনেহিঁচড়ে নিয়ে মারধর করে।

এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। কেউ তার পক্ষে তো কেউ বিপক্ষে। তবে, অধিকাংশ নেটিজেনরাই এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছেন। সেই সাথে জানিয়েছেন দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সালমা জাহান মিশু নামে একজন মন্তব্য করেছেন, নোরা ৪০ মিনিটের জন্য ১৫ লাখ টাকা নেয় আর হুজুর মাগরিবের নামাজের জন্য ওয়াজ বন্ধ করতে পারে না, এটা কেমন মূর্খতা।

মাহবুব খান নামে একজন লিখেছেন, ‘জানি না ঘটনা কতটুকু সত্য। যদি সঠিক হয় তাহলে এ রকম বক্তাদের ভ্যাট-ট্যাক্স এর আওতায় আনা হোক।’ আনোয়ারুল হাসান সুজন নামে একজন লিখেছেন, ‘যদি এ ঘটনা সত্যি হয় তাহলে তাদেরকে বয়কট করা উচিত।’ সাজ্জাদ হোসেন নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘সেখানে অফিসিয়াল ইউটিউবারদের ক্যামেরা বসাতে দিল না কেন? সেদিন ক্যামেরা বসাতে দিলে আমরা আজ সঠিক তথ্যটা জানতে পারতাম।’

এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. বুলবুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ওখানকার প্রোগ্রামটা মূলত মাগরিবের পর হওয়ার সুযোগ ছিল না। কারণ, দিনের প্রোগ্রাম সন্ধ্যার পর আলোকসজ্জার ব্যবস্থা ছিল না। আবু ত্বহাকে কেউ কিছু করেনি। তবে উনার যে সফরসঙ্গী ছিল দুই-তিন জন, তাদেরকে একটু ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে।

বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত