আগামীকাল শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন শুরু হবে। ওইদিন বিএনপিসহ অন্য দলগুলো গণমিছিল কর্মসূচি পালন করবে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে র্যাব ও পুলিশের স্পেশাল ফোর্স, ডগ স্কোয়াড ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিএনপির ১০ দফা কর্মসূচির আলোকে ভোট জালিয়াতি ও ভোট চুরির প্রতিবাদ, সরকারের পদত্যাগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং গ্রেফতার সব রাজনৈতিক নেতার মুক্তির দাবিতে এ গণমিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রথমে সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকাতেও ২৪ ডিসেম্বর এ কর্মসূচি পালন করার কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের হওয়ায় গণমিছিল ৩০ ডিসেম্বর করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। একইসঙ্গে সমমনা অন্য দলগুলোও ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। গণমিছিলটি দুপুর ২টায় শুরু হয়ে কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার হয়ে বাংলামোটরে গিয়ে ৫টায় শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।
এ সংক্রান্ত একটি চিঠি নিয়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন।
সাক্ষাৎ শেষে মঙ্গলবার রাতে ডিএমপি কার্যালয়ের সামনে জাহিদ হোসেন বলেন, নির্ধারিত সময়েই বিএনপির গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে লড়াই, সেই লড়াইয়ে আমরা জয়ী হব। এ কর্মসূচি সফল করাই এখন তাদের লক্ষ্য। তবে মিছিলের রুটের বিষয়ে নিশ্চিত করে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচির রুট (নয়াপল্টন-বাংলামোটর) ইতিমধ্যে দরখাস্তের মাধ্যমে ডিএমপিকে জানিয়েছি। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রুট যেটাই হোক, আমাদের গণমিছিল নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে সময়মতো সবকিছুই জানতে পারবেন।
পরে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি ৩০ ডিসেম্বর তাদের পূর্বঘোষিত দলীয় কর্মসূচি গণমিছিল করতে চায়। আমরা সার্বিক বিবেচনায় নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয় থেকে মগবাজার পর্যন্ত গণমিছিল করার অনুমতি দিয়েছি।
গণমিছিল ঘিরে কোনো বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতার আশঙ্কা করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। আমরা বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতার আশঙ্কা করছি না। তারা (বিএনপি) আমাদের সুশৃঙ্খল গণমিছিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরপরও যদি কেউ বিশৃঙ্খলা করে বা অরাজকতার চেষ্টা করা হয় তাহলে প্রচলিত আইনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে রাজধানীর ৭টি স্পটে গণমিছিল করার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপিসহ অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে বিএনপি নয়াপল্টনে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগরে, সাতদলীয় জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পাটি-এলডিপি পূর্বপান্থপথ থেকে গণমিছিল বের করবে। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা দুটি স্পটে মিছিল করবে। তবে কোন কোন স্পটে হবে তা এখনো চূড়ান্ত করেনি দলটি।
বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোটের শরিকদের নিয়ে ইতোমধ্যে আত্মপ্রকাশ হয়েছে ১২ দলীয় জোট। ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির নেতৃত্বে ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা ঐক্যজোট’ নামে আরও একটি জোটের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। তারাও রাজধানীর একটি স্পট থেকে গণমিছিল বের করার কথা রয়েছে।
গণমিছিলের ব্যাপারে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করলে কোনো সমস্যা নেই। তবে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) একেএম হাফিজ আক্তার ঢাকা মেইলকে বলেন, বিএনপির গণমিছিল নিয়ে পুলিশ সর্তক রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার গণমিছিলের অনুমতি আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া হবে। সেই অনুযায়ী পুলিশের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
-বাবু/এ.এস