সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫
মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যমের ভূমিকা
এস ডি সুব্রত
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩, ৫:৩৩ PM আপডেট: ২৩.০৩.২০২৩ ৫:৪৬ PM

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন আমাদের জাতীয় জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও  ইতিহাস। আমাদের পরম আরাধ্য স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি। এর জন্য প্রয়োজন ছিল সঠিক ও অকুতোভয় নেতৃত্ব। সে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে এদেশের মুক্তিকামী জনতা মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল পরম আরাধ্য স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা অর্জনে আরও নানাবিধ অনুষঙ্গের পাশাপাশি গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল অনন্য।

এ মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় নিয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের অবদান অনেক। মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকার, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল, প্রবাসী বাঙালি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত নিয়মিত-অনিয়মিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমে পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা বর্বরতা, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা তুলে ধরা হয় যার কারণে বিদেশি বন্ধু দেশগুলো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। সহমর্মিতা নিয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, সম্পাদকীয়, কবিতা, গান, প্রবন্ধ, কার্টুন ইত্যাদিও মাধ্যমে পাকিস্তানিদের নৃশংসতার নিন্দা-ক্ষোভ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন জানানো হয় সব ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এতে বীর  মুক্তিযোদ্ধারা অনুপ্রাণিত হন, জনমনের প্রত্যাশা বাড়ে এবং বিশ্ব জনমত গঠনে সহায়ক হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পথে এক ধাপ এগিয়ে যেতে থাকে। বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিতে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম সে সময় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আমাদের গনমাধ্যম বরাবরই দেশের জনগণের পক্ষে কথা বলেছে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ দেশীয় সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমগুলো স্বাধিকার আন্দোলনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তদানীন্তন পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক চলাকালেই ২২ মার্চে দেশের পত্রিকাগুলো ‘বাংলার স্বাধিকার’ শিরোনামের বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। এতে বঙ্গবন্ধুর শুভেচ্ছা বাণী প্রকাশ করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সাত কোটি মানুষের সার্বিক মুক্তির জন্য আমাদের এ সংগ্রাম। অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। এতে পাকিস্তান সরকার সংবাদপত্রের ওপর রুষ্ট হয় এবং সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারে অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে। তখন সে অবস্থায়  দি পিপল পত্রিকায় প্রকাশের জন্য ‘অবরুদ্ধ বাংলাদেশ : কণ্ঠরুদ্ধ সংবাদপত্র’ শিরোনামে প্রতিবেদন লেখা হয়। কিন্তু প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগেই ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনী দি পিপল অফিসে আক্রমণ করে এবং এতে ছয়জন সাংবাদিক নিহত হন। ২৫ মার্চের ‘সার্চলাইট’ নামের গণহত্যার খবর যাতে দেশ-বিদেশে প্রচার হতে না পারে, সে জন্য পাকিস্তানি বাহিনী হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানরত বিদেশি সাংবাদিকদের আটক করে। অধিকন্তু ২৬ মার্চে দৈনিক ইত্তেফাক এবং ২৮ মার্চে দৈনিক সংবাদ পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেয়। এসব সত্ত্বেও দেশি-বিদেশি সাংবাদিকেরা ও সংবাদ মাধ্যমগুলো বিশ্বজনমত গঠন, পাকিস্তানি বর্বরতার সংবাদ পরিবেশন, নিন্দা জানানো ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়াতে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযুদ্ধকালে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ৬৪টি পত্রিকা প্রকাশের তথ্য পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি দৈনিক এবং বেশির ভাগ সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, সাময়িক, বুলেটিন, ম্যাগাজিন, নিউজলেটার প্রভৃতি। এসব পত্রিকার মধ্যে মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ও আওয়ামী লীগের মুখপত্র জয় বাংলা পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে মুক্তযুদ্ধকালীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, ধ্বংসযজ্ঞের তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করা হয়। বঙ্গবাণী পত্রিকা পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ তুলে ধরে এর বিচার দাবি করে।

স্বদেশ পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং পাকিস্তানের বৈষম্যনীতি ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যৌক্তিকতা তুলে ধরে এবং মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে। সে সময়  আমাদের দেশীয় বিভিন্ন পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যায় বঙ্গবন্ধুর প্রহসনের বিচারের সমালোচনা, নারীদের প্রতি পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ন, ধর্ষণ ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করা হয়। এ পত্রিকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে অবস্থানের জন্য বিশ্বের ২৪টি দেশের প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আবেদন প্রকাশ করা হয়। রণাঙ্গন পত্রিকার সম্পাদকীয়তে ইয়াহিয়া খানের বিশ্বাসঘাতকতা, বঙ্গবন্ধুর বিচারের সমালোচনা, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যসহ মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাদায়ক বিভিন্ন বিষয় গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয় জনসমক্ষে। স্বাধীন বাংলার বিভিন্ন সংখ্যায় বাংলার নারীসমাজকে বাঁচানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। উল্লিখিত পত্রিকাগুলো ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ, সোনার বাংলা, বিপ্লবী বাংলাদেশ, নতুন বাংলা, জাগ্রত বাংলা, অগ্রদূত, অভিযান, মুক্তি, দুর্জয় বাংলা, বাংলার মুখ, জন্মভূমি, সাাপ্তাহিক বাংলা, দাবানল, স্বাধীন বাংলাসহ অনেক পত্রিকা সংবাদমাধ্যম নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সকল বাধা বিঘ্ন উপেক্ষা করে। গণমাধ্যমের সে সময়ের সাহসী ভূমিকা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত এম আর আখতার মুকুলের ‘চরমপত্র’, উৎসাহব্যঞ্জক  গান-কবিতা, রম্যরচনা দেশের জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের  সাহস সঞ্চয়ে  অসামান্য  ভূমিকা পালন করেছে। আমাদেও স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিযোদ্ধা আপামর জনতার পাশাপাশি আমাদেও দেশীয় সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমই শুধু ভুমিকা পালন করেনি।

আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে বিদের্শি গণমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তান বাহিনী  ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় বিদেশি সাংবাদিকেরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করেন এবং তা বহির্বিশ্বে প্রচার করে।  স্বাধীনতা যুদ্ধের  শুরু থেকেই বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, ইয়াহিয়া খানের ডায়ালগ নাটক ইত্যাদি ঘটনা ২৫ মার্চের ‘সার্চলাইট’ নামের গণহত্যার খবর যাতে দেশ-বিদেশে প্রচার হতে না পারে, সে জন্য পাকিস্তানি বাহিনী হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানরত বিদেশি সাংবাদিকদের আটক করে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী। ২৬ মার্চ কলকাতা আকাশবাণী, বিবিসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গুরুত্ব সহকারে গণহত্যার বিবরণ প্রচার করতে থাকে। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ লন্ডনের ‘দ্য অবজারভার’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়, রাশিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে পারে। মস্কো উপলব্ধি করতে পেরেছে, পরাশক্তিগুলো যদি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, তবে পাকিস্তানের গণহত্যা বন্ধ হতে পারে। অন্য একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অভ্যুত্থানের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থান সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তানি সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, শেখ মুজিবকে তারা ঢাকায় তাঁর নিজ বাসভবনে আটকে রেখেছে। অন্যদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, তিনি চট্টগ্রাম রয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, উপযুক্ত সময়ে ব্যবস্থা নেব।

এদিকে ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান মানেকশ পুনে সফর সংক্ষিপ্ত করে দিল্লি ফিরেছেন। ‘মুজিব যেভাবে বাঙালির মহানায়ক হলেন’ শিরোনামে অন্য একটি প্রতিবেদনে শেখ মুজিব কীভাবে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন, তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে সাংবাদিক সিরিল ডানের এক প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়। লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ ৩০ মার্চ ১৯৭১ সালে সাংবাদিক সাইমন ড্রিংয়ের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যিনি ২৫ মার্চের গণহত্যার সময় বাংলাদেশে ছিলেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঠাণ্ডা মাথায় ২৪ ঘণ্টা অবিরাম গোলাবর্ষণ করে প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে হত্যা করে। টাইম সাময়িকী ১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিল এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাতে তারা উল্লেখ করে, পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সম্ভবত কিছু সময়ের জন্য ঢাকাসহ পূর্বাংশের শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু অনির্দিষ্টকাল ৫৪ হাজার বর্গমাইলের বিশাল অঞ্চল বাগে রাখতে পারবে না। কারণ ব্রিটিশরাজ ১৯১১ সালে বাঙালির ভয়ে রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তর করেছিল। ১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিল নিউজউইক ‘একটি আদর্শের মৃত্যু’ শিরোনামে একটি নিউজ ছাপে। এতে বাঙালির আত্মবিশ্বাস, গণজাগরণ ও পাকিস্তানিদের প্রতি তাদের ঘৃণার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়। ডেট্রয়েট ফ্রি প্রেস ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাতে তারা উল্লেখ করে, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত বাংলাদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সরকার গত মঙ্গলবার পূর্ব পাকিস্তানের ওপর নিজের সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেছে এবং বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশের প্রতি স্বীকৃতি ও সহায়তার আবেদন জানিয়েছে।’ সে সময় ঘানার একটি সাপ্তাহিক-এর এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, ‘ইয়াহিয়া খান সংখ্যালঘুর শাসন কায়েম করেছেন। তাই বিশ্বের শান্তিপ্রিয় দেশগুলোর উচিত, সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ত্বরান্বিত করা।’

বিবিসির সাংবাদিক মার্ক টালির নিরপেক্ষ সংবাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসী প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত তথ্য তথা পাকিস্তানি বর্বরতা-নৃশংসতার খবর জানতে পেরেছে। এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সমর্থন বেড়েছে। মার্ক টালির মতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সিডনি শনবার্গ, অ্যান্থনি মাসকারেনহাস, সাইমন ড্রিং, অ্যালেন গিন্সবার্গ, নিকোলাস টোমালিন, মার্টিন গুনাকাট, জন পিলজার, ডেভিড, পিটার হাজেন হার্স্ট প্রমুখ সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করেছেন। এছাড়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মান, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে প্রকৃত ঘটনা বিশ্ববাসীর কাছে পত্রিকার মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। তাদের সাহসিকতা ও সংবাদ প্রকাশের  কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত হয়েছে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

ভারতের নয়াদিল্লি এবং  প্রায় সকল প্রদেশ থেকে প্রকাশিত পত্রিকাতে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতা  ও বর্বরতার চিত্র এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতাপরিচয় তুলে ধরে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করেছে, শক্তি যুগিয়েছে।  পশ্চিমবঙ্গের আনন্দ বাজার, দেশ, ত্রিপুরার সংবাদ, জাগরণ, গণরাজ. রুদ্রবীণা, নাগরিক জনপদ, সাপ্তাহিক সমাচার, দেশের কথা, সীমান্ত প্রকাশ ও ত্রিপুরার কথা নামে পত্রিকাগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে সহায়তা করেছে দারুনভাবে। উপরে উল্লিখিত  বিভিন্ন পত্রিকা পত্রিকা ছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিদেশ থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ সংবাদ, জনমত, বাংলাদেশ পত্রসহ আরো পত্রিকার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এ পক্ষে জনমত গঠনে সহায়তা করেছে সাধ্যমতো।

পরিশেষে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে,  বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথে  মুক্তিযুদ্ধে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ বিশ্ববাসী মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরেছে গণমাধ্যমের সাহসী ভূমিকার কারণেই। আমাদের উচিত গণমাধ্যমের সাহসী ভূমিকা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। এতে এ প্রজন্মের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার সাথে সাথে গণমাধ্যমের ভূমিকা জানতে পারবে। বর্তমান সময়ের গণমাধ্যম এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারবে এবং জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে সক্ষম হবে।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত