সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে সাঁতার কাটতে গিয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি) নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা।
সোমবার (২৪ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সৈকত এলাকা থেকে অল্প দূরত্ব থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মো. নাছির উদ্দীন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে সমুদ্র সৈকতে এসে সাগরের পানিতে সাঁতার কাটতে গিয়ে নিখোঁজ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী।
সৈকতে নিখোঁজ শিক্ষার্থীরা হলেন, মো. আলী হাসান মারুফ (২৩) ও এনায়েত উল্লাহ চৌধুরী (২২)। মারুফ আইআইইউসির শরিয়া অনুষদ (দাওরা) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। এ ছাড়া আরেক ছাত্র এনায়েত উল্লাহ চৌধুরী আইআইইউসি-এর কোরআনিক বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি ভৈরবে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুবাদে সীতাকুণ্ডের গুল আহমেদ জুট মিল গেট এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
বাঁশবাড়িয়া ইউ’পি চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী জাহাঙ্গীর জানান, সোমবার সন্ধ্যায় আইআইইউসির তিন শিক্ষার্থী বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসেন। সন্ধ্যায় ভাটার সময় তিনজনই সাঁতার কাটতে সমুদ্রে যায়। এ সময় স্রোতে ভেসে যায় মারুফ ও এনায়েত নামে দুই শিক্ষার্থী। তবে নিরাপদে বেরিয়ে আসেন নিহত দুই শিক্ষার্থীর সহকর্মী একরাম হোসেন নামে আরেক ছাত্র।
ইউ’পি চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর আরো জানান, সাগর থেকে বের হওয়া একরাম হোসেন নামের এক ছাত্র তাকে জানিয়েছেন, তার দুই বন্ধু সাঁতার কেটে সাগরে কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ স্রোতের নিচে ডুবে যায়। সেই সময় তিনি তাদের দেখতে পাননি এবং দ্রুত সমুদ্র থেকে উঠে আসেন। পরে তিনি সমুদ্রের তীরে দোকানে ছুটে যান এবং নিখোঁজ দুই বন্ধুকে উদ্ধারে সাহায্য চান। ছাত্র নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং জাতীয় জরুরি নম্বর 999 এবং ফায়ার সার্ভিসে কল করেন।
ফোন করার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও তারা সাগরে নিখোঁজ ছাত্রকে উদ্ধার করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় তারা আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসে ফোন করে আশেপাশের শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে ডুবুরি দলের সহায়তা চান। নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের জন্য আইআইইউসি শিক্ষক ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করার আগেই স্থানীয় বাসিন্দারা নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীকে খুঁজতে শুরু করেন।
সমুদ্র উপকূলে অনুসন্ধানের সময় নিখোঁজ হওয়ার প্রায় চার ঘন্টা পর সৈকত এলাকা থেকে কিছু দূরে তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এ সময় স্থানীয়রা নৌ-পুলিশের সহায়তায় দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ সমুদ্র তীরে নিয়ে আসে।
কুমিরা নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মো. নাছির উদ্দীন জানান, ফুসফুসে পানি প্রবেশ করায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে এক শিক্ষার্থীর ফুসফুসে অতিরিক্ত পানি প্রবেশ করায় তার মুখ থেকে রক্ত বের হয়। পরে তারা লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় চান শিকদার জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে আসেন। সারা শরীর থেকে কাদা সরানোর জন্য সেখানে তাদের গোসল করানো হয়। এরপর সুরতাহল প্রতিবেদন তৈরীর পর দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বাবু/এ.এস