দেশমাতৃকা সুরক্ষায় বাঙালির রয়েছে অপার প্রাণশক্তি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাঙালির ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মতো বড় সাফল্যের পরে একে একে পার্বত্য শান্তি চুক্তি, দারিদ্র্য বিমোচন, মঙ্গা দূরীকরণ, সমুদ্রসীমা বিজয়, ছিটমহল সমস্যা সমাধান, লাখো রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় প্রদান, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরিসহ নানা কাজ বাঙালি আপন শক্তিতে করেছে।
আগামী পথ চলায় আমরা মানবমুক্তি, মানবিক এবং আত্মমর্যাশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। কোনো পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা নেই। বাংলাদেশ এক ভিন্ন শক্তিকে নতুন উচ্চতায় যেতে চায়। এটিই হবে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উজ্জীবিত প্রাণ সঞ্চারিত মূলধারা। সে ধারায় আগামীতে বিশ্বের বহু মানুষ শামীল হবে। সুতরাং আগামী বিশ্বের নেতৃত্ব বাঙালি দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
আজ শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এডুকেশন রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি) ও সাপ্তাহিক উদ্যোক্তা যৌথভাবে আয়োজিত ‘স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের উপর বিদেশিদের হস্তক্ষেপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য।
দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান আরো বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যকোনো দেশের সঙ্গে আমার সবুজে-শ্যামলে ভরা দেশমাতৃকার তুলনা করি না। বাংলাদেশ তার অনন্য শক্তিতে অপরূপ ও ভরপুর। এটি শুধু সবুজে-শ্যামলে অনন্য তা নয়, এই দেশমাতৃকা সৃষ্টিতে আমার মতো, আপনার মত ৩০ লক্ষ মানুষ লাফিয়ে লাফিয়ে আত্মোৎসর্গ করেছেন। তাঁদের প্রত্যেকের জীবনে অন্য স্বপ্ন ছিল। তাঁরা অন্য কিছু হতে পারতেন, দীর্ঘায়ু হতে পারতেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে সুন্দর, স্বাভাবিক জীবন গড়তে পারতেন। সে পথে না গিয়ে তাঁরা একটি জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য বন্ধুকের সামনে যুদ্ধ করে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। ২ লক্ষ মা-বোন নির্যাতন সয়ে সয়ে মানচিত্র এঁকেছেন।
সেই মানচিত্রে আঘাত হানবেন। আর বাংলাদেশের মানুষ নীরবে, নিভৃতে বসে থাকবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। এটি ইরাক নয়, আফগানিস্তান নয়- এটি বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সাড়ে সাত কোটি মানুষ এক হয়ে ঠিক করেছি আমাদের স্বতন্ত্র ভূখণ্ডের আগামীর পথ চলা কী হবে। আগামীর পথচলায় সংবিধানে চার মূলনীতি ঠিক করেছি- বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। এগুলোই আমার জাতিরাষ্ট্রের দর্শন। এর বাইরে যা কিছু হবে তার বিরুদ্ধে বাঙালি সোচ্চার থাকবে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত।’
বিদেশিদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আপনারা নিজ দেশের প্রতি আরও বেশি যত্নবান হোন। আপনাদের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, সেটিকে রক্ষায় মনোযোগী হোন। স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, গাড়িতে হামলা করে পুলিশ মানুষ মারছে সেসব বন্ধে আপনাদের নজর দেয়া জরুরি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির পথে এগোচ্ছে সঠিকভাবে।’
‘মিয়ানমার থেকে একরাতে যেদিন লাখো শরণার্থী আশ্রয়হীন হয়েছিল বিদেশি ১৪০ জন বিবৃতিদাতার স্বাক্ষরের কলম সেদিন কোথায় ছিল? কেন এই লাখো শরণার্থীর মানবিক আশ্রয়ে আপনারা।
বাবু/জেএম