মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫ ৯ বৈশাখ ১৪৩২
মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫
অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া কক্সবাজার সদর হাসপাতাল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৭:০০ PM আপডেট: ১৫.০৯.২০২৩ ৮:৩০ PM
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের নারী ডাক্তার, নার্সকে যৌন হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের হলেও এখন প্রকাশ্যে ফুটে উঠেছে। ইতিমধ্যে তার যৌন হয়রানির জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সিনিয়র গাইনি কনসালটেন্ট সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।

কক্সবাজারের স্থানীয় ব্যক্তিদের ছাটাই করে নোয়াখালী-ফেনি থেকে আত্বীয়-স্বজন এনে এনজিওর মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছেন বিভিন্ন পদে। শুধু তাই নয় নতুন নির্মিত আউটডোরে ক্যান্টিনটি কোন টেন্ডারবিহীন পছন্দনীয় আফরিন সুমি নাকে এক নারীকে দিয়েছেন হাসপাতাল তত্ত্ববধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান। বিদ্যুৎ বিল, তিনটি কক্ষসহ যাবতীয় খরচ হচ্ছে সরকারি। অতচ প্রতি মাসে কোন ধরনের ভাড়ার অর্থ যাচ্ছে না সরকারি কোষাগারে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমানের সাবেক কর্মস্থল বরিশাল থেকে বর্না শাহা নামে এক নারীকে এনে নিজের মতো পদ সৃষ্টি করে এনজিও সংস্থা আইএমওকে বাধ্য করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বেতন দিচ্ছেন। যে পদ সৃষ্টি করেছে সিনিয়র ফার্মাসিস্ট নামে বাংলাদেশের কোন সরকারি হাসপাতালে এই পদ নেই। অতচ এই নারীকে বেসরকারি পর্যায়ে চাকরি দেয়া হলেও সরকারি প্রশাসনিক ব্লকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। হাসপাতাল কমচারী ও কমতাদের অভিযোগমতে, এই নারী কোন কাজ না করে প্রতি মাসে লাখ টাকার উপরে বেতন নিচ্ছেন। প্রায় সময় হাসপাতাল তত্ত্বাবধয়াক ডা. মোমিনুর রহমানের অফিস কক্ষে বসে থাকেন। সন্ধ্যা হলেই স্কুটি চালিয়ে তার পেছনে বসান হাসপাতাল সুপার মোমিনকে। এমন ছবিও সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্না শাহা নামে এই নারীকে সরকারিভাবে নিয়োগ পাওয়া তিন ফামাসিস্টকে দেখভাল এর জন্যই নাকি  নিয়োগ দেয়া হয়েছে এমন তথ্য বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে নোয়াখালী, ফেনী ও নিজের জেলা লক্ষীপুর থেকে শতাধীক আত্বীয়-স্বজন কক্সবাজারে এনে এনজিও সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন, মোমিনুর রহমানের ভাগিনা টিকেট কাউন্টারের রাসেল, রুবেল, মোমিনুর রহমানের বন্ধুর ছেলে ফেনি জেলার অংকন দাশ-তার পদবী আইটি অপারেটর, বরিশাল থেকে আনা রাকিব বতমানে সুপারের ড্রাইভার, হাসপাতালের সুপারের বডি গাড ফেনি জেলার হৃদয়, হাসপাতাল সুপারের ঘনিষ্ঠ আত্বীয় ব্লাড ব্যাংকে কর্মরত সাবেক শিক্ষক শাহিন, হাসপাতালের আয়া-শিউলি, তার স্বামী সুপারভাইজার রাজিব চৌধুরী।

সূত্রমতে, কক্সবাজারে জেলা সরকারি হাসপাতালটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে গড়ে তুলেছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান। নিজের ইচ্ছেমত এনজিওর মাধ্যমে লোকজন নিয়োগ করে আবার নিজের ইচ্ছেমতো ছাটাই করে। তবে সম্প্রতি ২৫ জন চিকিৎসক নিয়োগেও ১৭ লাখ টাকার ঘুষ গ্রহণ করেছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান। আগের ৬৭ জনকে চাকরিচ্যুত করে তার পছন্দমতো ২৫ জন মেডিকেল অফিসার নতুনভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এনজিও আইএমও কর্মকর্তাদের চাপ প্রয়োগ করে নামে মাত্র পরীক্ষা দিয়ে অবৈধভাবে নিয়োগবাণিজ্য করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান। এসবে জড়িত রয়েছেন এনজিও সংস্থার কিছু কর্মকর্তাও।

এসব অভিযোগ ছাড়াও হাতপাতালে ট্রেনিংরত প্রায় নারী ডাক্তারদের সাথে খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে। এনজিও থেকে নিয়োগ পাওয়া ডা. সুলভ আশ্চর্যকে দিয়ে এসব অপকর্ম করান তিনি। তার স্ত্রী ফাহীম তাসনুবার বিরুদ্ধে ৭ নারী স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ দিলে কোন ব্যবস্থা নেননি তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান। উল্টো তার যৌনাচারে যারা শরীর ভাসিয়ে দেননি তাদেরকে লেলিয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল সুপার।

কিছুদিন আগে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের টেন্ডারবিহীন দুই ট্রাক যন্ত্রাংশ বিক্রি করার সময় ধরা পড়ে আবার ফেরত এনেছেন তত্ত্বাবধায়ক মোমিন। কক্সবাজার ব্লাড ব্যাংক থেকে আয় হওয়া টাকা থেকে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা ঘুষ নেন ডা. মোমিনুর রহমান। এসব টাকা দেন মেডিকেল অফিসারের মাধ্যমে টিপু। এছাড়াও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়োজিত এনজিও থেকে কয়েক কোটি টাকা কমিশন নিয়ে থাকেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান।

নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, হাসপাতালের সুপার মোমিন নিয়োগ পেয়েই তার পছন্দের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জনসেবা এন্টারপ্রাইজকে টেন্ডার কারচুপির করে কোটি টাকার খাবারের কাজ পাইয়ে দেন। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক জহির খান হাসপাতাল সুপার মোমিনের খুব কাছের ব্যক্তি। তাই নয় ছয় করে রোগীর খাবার থেকে মোটা টাকা কামিয়েছেন হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান।

এদিকে হাসপাতালের সুপার মোমিনুর রহমানের দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদ করায় সাংবাদিক মহিউদ্দিন মাহীকে অপারেশনে অদক্ষ চিকিৎসক দিয়ে অবশ করে ফেলেছেন। সাংবাদিক মাহী কিছুটা সুস্থ হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগ আমলে নিয়ে ইতিমধ্যে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমানকে বদলী করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত