দেশি-বিদেশি পর্যটক বাড়ানোর জন্য কক্সবাজারসহ আশপাশের এলাকা আরও আকর্ষণীযয় করে গড়ে তোলা হচ্ছে। সেইসাথে বদলে যাচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। এ লক্ষ্যে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নমূলক কাজ। তিনটি বড় মেগা প্রকল্প ছাড়াও ছোট-বড় প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার কাজ চলমান।
এদিকে কক্সবাজারকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে ও পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্য কাজ করছেন জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় গতবছরের মত এবারও বৃহৎ আকারে শুরু হচ্ছে পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল। এই মেলাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন কক্সবাজার। গত বুধবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে প্রেস কনফারেন্স'র মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ শাহীন ইমরান।
তিনি বলেন, ‘সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। একসাথে তিন দিনের সরকারি ছুটি পড়ায় এবং পর্যটকদের সুবিধার্থে ১০% থেকে সর্বোচ্চ ৬০% পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হবে। তাদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে চলাচলে সিসি ক্যামেরা ও প্রশাসনের আলাদা টিম কাজ করবে। আশা করা হচ্ছে ওই সময়ে লোকে লোকারণ্য থাকবে এই কক্সবাজার।’
আয়োজিত কনফারেন্সে জানানো হয়, ‘সাত দিনব্যাপী মেলা সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রাখা হবে। হোটেল রোস্তোরায় ঠিকমত ছাড় দিচ্ছে কি-না তা তদারকি করা হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসন সজাগ থাকবে। পর্যটন সংক্রান্ত যে কোন প্রয়োজনে ট্যুরিস্ট পুলিশের কন্ট্রোল রুমের ০১৩২০১৬০০০০ নাম্বার চালু থাকবে।’
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম, ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. জাহিদ ইকবাল, বিভীষণ কান্তি দাশ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ইয়ামিন হোসেন, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় বারের মত সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল। মেলা ও কার্নিভালকে ঘিরে সমুদ্র সৈকতের লাবনী মোড়ে দুই শতাধিকেরও বেশি স্টল তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। স্টলগুলোর নামকরণসহ পর্যটক আকর্ষণে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। হোটেল, রেস্তোরাঁ, কিটকট, বাস ভাড়া, হেলিকপ্টার, টিউব, ফটোগ্রাফার, প্যারাসাইলিং গাড়ি পার্কিংসহ পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত সকল প্রতিষ্ঠানে থাকবে ১০% থেকে ৬০% পর্যন্ত ছাড়। এই আয়োজন ও অফার পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে মনে করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, ‘পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজারে আরও বেশি পর্যটক মুখি করতে এই আয়োজন ইতিবাচক সাড়া ফেলবে। বিশ্বের কাছে আরও বেশি পরিচিতি পাবে কক্সবাজার।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, মেলায় দুই শতাধিক স্টল থাকবে। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এ উৎসব ঘিরে থাকছে নানা আয়োজন। এসবের মধ্যে রয়েছে-সার্কাস প্রদর্শনী, বিচ বাইক র্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে শো, আতশবাজি, রোড শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, বিচ ম্যারাথন, বিচ ভলিবল, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান এবং কনসার্ট।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উদ্বোধনের দিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কমেডিয়ান আরমান ও সুদীপ্তা উপস্থাপনায় থাকছে বান্দরবানের নৃত্য, বাংলা গানের নাচ, ব্যান্ড বাউলা ফড়িং, গান পরিবেশন করবেন বুলবুল আক্তার, পারভেজ খান, ইফতি, শাহ বাউল আব্দুল করিমের গানের দল (সুনামগঞ্জ), ফাতেমা-তুজ-জোহরা, ঐশি ও ডিজে তুষার। এছাড়া মেলা চলাকালীন প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকছে নতুন নতুন চমক। সমাপনী দিনে সংগীতে অংশ নেবেন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী রবি চৌধুরী, পথিক নবী ও ব্যান্ড চিরকুট।
২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের অনুষ্ঠিত হয়েছিল পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল। কক্সবাজারে পর্যটক বাড়াতে ও বিশ্বের কাছে কক্সবাজারকে তুলে ধরতে এই আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। এর আগে বিশ্ব পর্যটন দিবসে মেলার আয়োজন করে আসলে মূলত গত বছর থেকে বড়সড় করে হচ্ছে এই আয়োজন। জানা যায়, এবারের মেলায় ২০০ এর বেশি স্টল স্থান পাবে। এসব স্টলে কক্সবাজারের পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে থাকবে আচার, শুঁটকি ও পিঠাসহ হরেক রকমের আয়োজন।
এ ছাড়াও মেলায় থাকছে আগামী জীবনের প্রজন্ম বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কৌতুক, কক্সবাজারের নানা ঐতিহ্য নিয়ে নাটক। প্রতিদিন সন্ধ্যায় সৈকত-তীরের বিশাল মঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন স্থানীয় ও দেশের খ্যাতনামা শিল্পীরা। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এই আয়োজন চলবে। অন্যবারের তুলনায় এইবারের মেলা একটু ভিন্নমাত্রা পাবে। অন্যন্য বছরগুলোতে মেলাটি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে করা হলেও সীমাবদ্ধতার মধ্যে একদিনেই শেষ হতো। তবে, গত বছর থেকে এর পরিধি বেড়েছে। সাতদিন ব্যাপী মেলা ও বিচ কার্নিভাল হচ্ছে। এটিকে পর্যটনখাতে আরও আশার আলো জাগাবে বলে মনে করছেন পর্যটনসেবীরা।
বাবু/জেএম