সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫ ৮ বৈশাখ ১৪৩২
সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫
মূলধারা, কালিক চিত্রকল্প ও চেতনার চারদিক
ফকির ইলিয়াস
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩, ৪:২৪ PM
বাংলা কবিতার মূলধারা কি সে সম্পর্কে বিভিন্ন উদাহরণ উপস্থাপন করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বাংলা ভাষাভাষি মানুষ আত্মিকভাবে যে সব পঙ্ক্তিমালাকে গ্রহণ করে নিয়েছেন, সে সময়ে সেগুলোই হয়ে উঠেছে বাংলা কবিতার মূলধারা। বৈষ্ণব পদাবলি, ধর্মীয় শ্লোক, চর্যাপদ থেকে শুরু করে একসময়ে খনার বচনের মতো পঙ্ক্তিও মুখে মুখে ফিরেছে। জননন্দিত হয়েছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, কালে কালে কিন্তু কবিতার ধারা বদলে যাবার সাথে সাথে পাঠক-পাঠিকার রুচিও বদলেছে। গ্রহণ এবং বর্জনের স্রোতের মাঝেই নির্মিত হচ্ছে এবং হয়েছে সব নতুন বিবর্তনের স্পন্দন।

একজন মরমী কবি বাউল সাধক ফকির আরকুম শাহের একটি গান এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। “তুমি-আমি, আমি-তুমি জানিয়াছি মনে, বিচিতে জন্মিয়া গাছ বিচি ধরে কেনে/ এক হইতে দুই হইলো প্রেমেরই কারণ/ সে অবধি আশিকের মন করে উচাটন/ বন্ধু নিরধনিয়ার ধন/ কেমনে পাইমুরে কালা তোর দরশন।”

বীজ থেকে গাছ জন্ম নেয়। আবার সেই গাছই ধারণ করে নিজের বীজ। এই বিজ্ঞান সম্মত ‘রিসাইক্লিং প্রসেস’, সে চেতনা উঠে এসেছে একজন মরমী সাধকের পঙ্ক্তিমালায়। আমার মতে এই চক্রাকারে ঘূর্ণনের মাধ্যমেই নির্মিত হচ্ছে, হয়েই যাচ্ছে, একটি ভাষা সাহিত্যের কবিতার মূলধারা।

বেশি দূরে না গিয়ে তিরিশের দশকের পঞ্চকবির সাধনার কথাই ধরা যাক। পাঁচজনের মধ্য থেকে টিকে থেকেছেন সার্বজনীনভাবেই জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্র ছায়া পরবর্তী সময়ে বাঙালি পাঠক তার কাব্য রুচিকে বিভিন্নভাবে আস্বাদনে ব্রত হয়েছেন। জনপ্রিয় সমিল ছন্দের কবিতা লিখে জসীম উদ্দীন ‘পল্লীকবি’ খ্যাতি পেয়েছেন। বেগম সুফিয়া কামাল পৌঁছে গেছেন বাঙালির ঘরে ঘরে। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে সেই কালই সহায়ক হয়ে এসব কবিদের খ্যাতিকে শিখরে পৌঁছিয়েছে। সে সব বাংলা কবিতার মূলধারার অংশ নয়?

পঞ্চাশের দশকে বাংলা কবিতায় নতুন বাঁক নির্মাণের প্রচেষ্টা আমরা গৌরবের সাথে লক্ষ্য করি। এ সময়ে আহসান হাবীব, হাসান হাফিজুর রহমানের মতো কবিরা তাদের পরিশুদ্ধ ধীশক্তি দিয়ে নিজস্বতা প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হন।
বাংলা কবিতাকে নবতর পরিপূর্ণতা দিতে এগিয়ে আসেন শামসুর রাহমান। তাঁর কর্মযজ্ঞের ব্যাপৃতি বাংলা কবিতার নান্দনিকতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। জীবন ও রাজনীতির পাঁজরে ছিড়ে শামসুর রাহমান লিখেছেন ‘স্বাধীনতা তুমি’ কিংবা ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ এরকম বেশ কিছু কবিতা।

বাংলা কবিতার মূলধারার স্তম্ভ নির্মাণে বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলন বিস্ময়কর ভূমিকা রেখেছে বলে আমি মনে করি। বায়ান্নোর মহান ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলা কবিতার খাতাকে শুধু সমৃদ্ধই করেনি, দিয়েছে বহমান বিশ্বকবিতার মাঠে সোনালি ফসল। যা কিনা, যে কোনও ভাষার কবিতার মতোই শক্তিশালী, সাবলীল।

বিশ্ব কবিতার খামার থেকে কবিতার বীজ সংগ্রহ করা, নৈর্ব্যক্তিক উপাদান, উপাত্ত এবং উৎসের সন্ধানকে আমি কোনোমতেই খাটো করে দেখি না। বিভিন্ন বক্তব্য বিভিন্ন ভাষায় সমান উজ্জ্বলতা পায় না। প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শও সব কবির দ্বারা সমানভাবে আহরিত হয় না। তাই অন্য কোনো ভাষার কবিতার প্রতি মনস্ক হলেই তা যে প্রভাব ফেলবে বা ফেলতে পারে, তাও আমি বিশ্বাস করি না।

ইউরোপীয় কবিতা, পারস্য কবিতার প্রভাব বয়ে বেরিয়েছে এমন কথাও বলেন কেউ কেউ। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকার কবিতাও ভাব বিনিময় করে নিজস্বতা নিযে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন সাহিত্যে ফোকলোর লিটারেচারের বিবর্তনও আমরা লক্ষ্য করি। লোকজ আবহ, আধ্যাত্মিক চেতনা, মরমীবাদ নিয়ে কবিতা লিখেছেন মার্কিন কবি অ্যালেন গিনসবার্গ, ডব্লিউ এস. মারউইন, জন অ্যাশবেরিসহ অনেক বিশিষ্ট কবি। আনন্দের কথা হচ্ছে পাশ্চাত্যে এসব কবিরা বিশেষভাবে সম্মানিত হন, আহত হন। বাংলার লোককবি, মরমী কবিরা সেভাবে সম্মানিত হবার সুযোগ পান না, এটা পরিতাপের বিষয় বৈকি!

বাংলা কবিতার স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন সময়ে। আল মাহমুদের সোনালি কাবিন, নির্মলেন্দু গুণের ‘হুলিয়া’, শহীদ কাদরীর ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ্ ‘আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালা’ রফিক আজাদের ‘ভাত দে হারামজাদা নইলে মানচিত্র খাব’সহ এরকম বেশ কিছু পঙ্ক্তিমালা বাঙালি পাঠককে শানিত করেছে।

আমরা লক্ষ্য করছি, এ সময়ে বেশ কিছু তরুণ কবি বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায়, দেহতত্ত্ব, প্রেমতত্ত্ব, কামতত্ত্ব, বিরহ-বিচ্ছেদতত্ত্বসহ মরমীবাদের নানা চিত্রকলা, উপমা ব্যবহার করে কবিতা লিখছেন। কালে এগুলোও মূলধারার প্রতীক বলে বিবেচিত হবে, সে বিশ্বাস আমি করেই যাচ্ছি। আধুনিক কবি, লোককবি সবার সম্মিলিত সাধনার মাধ্যমেই নির্মিত হচ্ছে বাংলা কবিতার মূলধারার মাঠ। যে মাঠে এখনো নবীন কবিদের আলোকবর্তিকা হয়েই থেকে যাচ্ছেন, ‘যে তুমি হরণ করো’ কিংবা ‘পৃথক পালঙ্ক’ এর কবি আবুল হাসান।

বর্তমান কবিতাগুলো কি আসলেই খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে? নাকি ঝাপসা চিত্রকলা এবং উপমার সমুদ্রে খেই হারিয়ে ফেলছেন পাঠক? ঝাপসা কিংবা কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের সূর্যোদয় যারা অবলোকন করেন তারা কি শুধুই স্বপ্নবিলাসী? এমন অনেকগুলো প্রশ্ন আজকাল প্রায়ই শোনা যায়। আবার কেউ কেউ আধুনিক অনেক গদ্যকবিতায় তাদের ছন্দের ব্যারোমিটার বসিয়ে দূরবীন দিয়ে দেখার চেষ্টাও করেন। কখনো তারা সফল হন। কখনো তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। আবার কেউ কেউ নিজেকে ছান্দসিক কবি ভেবে আত্মতৃপ্তি লাভে আটখানা হন।
স্বপ্ন বিলাস তা যাই হোক না কেন, কবিতা যে এগিয়ে যাচ্ছে তাই হচ্ছে বর্তমানের প্রকৃত বাস্তবতা। কোন কবিতা কালের প্রতীক হয়ে দাঁড়াবে তা অতীতে যেমন বলা যায়নি, বর্তমানেও বলা যাবে না। উদাহরণ স্বরূপ জীবনানন্দকে আবারো প্রণাম করি। শতাব্দীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত তার বিচরণ আমাদেরকে আশান্বিত করছে বৈকি! তার আধুনিক চেতনা এবং নান্দনিক প্রত্যয় কালের বাহক হয়েই থেকে যাচ্ছে। যাবে একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত। তা এমুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে। ক্রমশ তাঁর অস্তিত্ব হবে উজ্জ্বলতর।

কবিতা লেখাকে অনেক কবি মৌলতাত্ত্বিক এবং সমসাময়িক প্র্যাক্টিস বলে মনে করেন। তাদের এমন ধারণার পেছনে যুক্তিও আছে প্রচুর। কারণ অনুভবের অনুস্মৃতি এবং প্রার্থনার চেতনা তো হৃদয় থেকেই উৎসারিত হয়। একজন মানুষ চোখ খোলা রেখে অনেক কিছু দেখতে পায়। আবার চোখ বন্ধ করেও অনেক কিছু দেখতে পায়। একথা আমরা সবাই জানি এবং বুঝি। কিন্তু হৃদয়ের চোখের আয়নায় দাঁড়াতে পারি কজন?

কবিতার স্পর্শ, সে আয়নাকে আমাদের মুখোমুখি করে দেয়। চারপাশে ঘটে যাওয়া নিয়মিত চেতনার উন্মেষ আমরা জমা করতে পারি আমাদের মননশিল্পে।

হলুদ ইস্কুলভ্যান, সাদা-নীল ইউনিফর্ম, চারগুছি বিনুনি
থেকে থেকে ভেসে ওঠে ফ্ল্যাট স্ক্রিন ডেস্কটপে, ওয়ালপেপারে। (ডেস্টটপ/অপূর্ব দত্ত)
অথবা আজকের বহুল আলোচিত মোবাইল ফোনের টকটাইমও হয়ে উঠতে পারে একটি কবিতার প্রতিপাদ্য বিষয়।
টকটাইম তো ফুরোচ্ছে হায় দ্রুত
লাইফটাইম শেষ
তোমার আমার মধ্যে এখন
সাগর অনিঃশেষ ...
(টকটাইম ফুরিয়ে আসছে/ফাল্গুনী ভট্টাচার্য)

কবিতার কল্পচিত্র সব সময়ই বিশ্বজনীন এবং সার্বজনীন। এ প্রসঙ্গে কয়েকজন মার্কিন কবির সমসমায়িক কবিতার বাংলা তর্জমার কিছু খণ্ডচিত্র তুলে ধরতে চাই। এরা যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃত কবি। যারা কবিতার ব্যঞ্জনা এবং ঘূর্ণায়নের মাধ্যমে শৈল্পিক আবহকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ‘সোনালি মানুষ’Ñ কবিতায় কবি ডানা লোভন সোনালি মানুষটিকে এভাবেই নির্মাণ করেন, ‘এবং এসিড এসে ধৌত করে দেয় তাঁকে,/হ্যাঁ, আমি ছোট্ট মানুষটিকে নির্মাণ করছিলাম।’

একটি কবিতা তখনই প্রকৃত সার্থকতা পায় যখন একটি একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি সার্বজনীনতা লাভ করে। একটি হৃদয়ের আকাক্সক্ষা হয়ে ওঠে বহুটি হৃদয়ের প্রভাষণ। কবি ক্যাথরিন লিডিরার তার ‘বেঁচে থাকার একটি নতুন পথ’ কবিতাটির মুখবন্ধ শুরু করেছেন এভাবে, ‘আমি ক্লান্ত এভাবে ক্ষমা করতে করতে/ একটি রাত, একটি গাম্ভীর্যপূর্ণ ফোরাম যেমন/ একটি মধ্যস্থতা ...’

একটি কবিতায় বহুমাত্রিক অনুযোগ কিংবা অনুপ্রাস কবিতাটিকে সমৃদ্ধ করে নিঃসন্দেহে। যে কথা অনেকে বলতে কিংবা লিখতে পারেন না তা কবি পারেন। সে ক্ষেত্রে কবি হয়তো বা বেছে নেন একটি আধুনিক পরাবাস্তব পটভূমি। যে ভূমিতে বিচরণ করে একজন কবি তার কাছের চারপাশকে খুঁজে পান নিজের মাঝেই। এই কবিতাটি পাঠ করা যাকÑ
শরীরে জড়িয়ে বৃক্ষের পরজীবী
অন্ধকারের বাকলে লজ্জা ঢেকে
পৃথিবীকে ধরি আঁকড়ে শিকড়জুড়ে
বৃক্ষশরীর আপনি গিয়েছে বেঁকে।

বাকলে আমার সমাজবদ্ধ দায়
বাকলে আমার আগুনের ওড়াউড়ি
শত শত রাত অভিজ্ঞতার ভারে
করাতের গায়ে আঁচড় কেটেছে গুঁড়ি। 
(আত্মকথন/নবমিতা সান্যাল)
এই যে সমাজসীমানার মাঝে বেড়ে ওঠা, তার প্রতিকৃতি অন্য কোনো কবি হয়তো এঁকেছেন শত বছর আগে। বর্তমানের কবি আঁকছেন তার জীবন দর্শনের সাথে সঙ্গতি রেখে। সাম্যের আদর্শ, সুনীতি প্রতিষ্ঠার সামাজিক সংস্কার গ্রহণের মাধ্যমে একজন কবি- তার উত্তর প্রজন্মের জন্য নির্মাণ করেন একটি বিশুদ্ধ নিবাস। কবি জন ইয়াউ-এর তেমনি কিছু কথা আমাদের কানে বাজে, বুকে লাগে। তার ‘রাশিয়ান চিঠি-৩’ কবিতার কয়েকটি পঙ্ক্তি, ‘প্রিয় মেঘের চিত্রকর/ কি প্রমাণ থাকবে সেখানে/ যখন দোকানি/ আমাদের ধূলিচিহ্ন ঝেড়ে ফেলে দেবে ছোট্ট নালীতে ...’।

একইভাবে কবি ডানা লোভন-এর আহ্বান জাগিয়ে তুলে তার সহযাত্রী অনুজদেরকে। ‘কাজ’ কবিতায় তার বাণীগুলো এরকম, “এই সেই আমেরিকা/তুমি পাত্রের মধ্যে পানি রাখো/এই সেই তোমার শতাব্দী/যে চুলোয় তুমি আগুন জ্বালো/ তুমি অনুভব করো, এই শহর, তোমার চারদিকের ধ্র“ব, যেভাবে তুমি কালো চা রাখো কাপের মাঝে।”

যুক্তরাষ্ট্রের সমসাময়িক অন্যতম প্রধান কবি মি. জিরাল্ড স্টার্ন-এর স্বগতোক্তি থেকে কালিক কবিতা নির্মাণে চিত্রকল্পের ব্যবহার সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যেতে পারে। স্টার্ন বলেন, আমার কবিতায় আমি আমার সময়কেই ধরে রাখতে চেয়েছি। বর্তমানই ছিল আমার কাছে মূল বিবেচ্য বিষয়। জীবনের রং অনেকটাই তো ফ্যাকাশে। মহাসাগর পাড়ি দিয়ে যেজন এগিয়ে আসতে পারে সেই হয় ভাগ্যবান জীবনের অধিকারী।
কবিতায় সমসাময়িক বিষয় এবং চেতনার ব্যাপ্তি বর্ণনা থাকা স্বাভাবিক। শত বছর আগে একজন কবি কম্পিউটার, ই-মেইল, ইন্টারনেট সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। বর্তমানের কবিরা এই গ্লোবাল ভিলেজে বসবাস করে এসব বিষয়গুলোকে রপ্ত করছেন মনে-প্রাণে। তাদের চিন্তা-চেতনায় এখন সংস্কৃতির বিজ্ঞানমনষ্কতা।

মনে রাখা দরকার, বিধান বা নীতিমালা সবসময় মানুষের কল্যাণেই রচিত এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোনো জাতি, ভূমি, পতাকা যেমন মুক্তি খুঁজেছে কালে কালে, তেমনি মুক্তির নিঃশ্বাস চেয়েছে কবিতাও। আর চাই কবিতার সীমানা ভেঙেছে। সীমানা গড়েছে। কবিরা সাহস করে এগিয়ে গেছেন মুক্ত যতি চিহ্নের ব্যবহারে। বেড়েছে আত্মার সাথে ভূমিজ পংক্তিমালার গভীর আত্মীয়তা। ফিরতে চেয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও। বলেছিলেন ‘এবার ফিরাও মোরে।’ সেই ফেরাকে অনুগামী করে বর্তমানের কবি সহজেই পেয়ে যাচ্ছে তার কবিতায়
সিলিকিন ভ্যালীর আলোর ঝলক। একবিংশ শতাব্দীর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তাইতো মাইকেল ও’নীল বলে যান- “আমি ক্রমশ শব্দগুলোকে বন্দী করছি একটি দুর্দান্ত বাক্সের ভেতর/ ফুলগুলো যেন ফুটছে আমার হাত দিয়ে... সবুজ গোপনগুলো স্থির হয়ে দাঁড়াচ্ছে একটি কালো জমিনের বিপরীতে/ এভাবেই মধ্যরাতের আন্তঃজালে (ইন্টারনেটে) আমি খেলছি তোমার সাথে।”

আধুনিক চিত্রকল্পগুলো, আধুনিক মননের বুনন। এ বুনন তখনই আরো সমৃদ্ধ হয় যখন একটি কবিতার শিল্পায়ন ঘটে আন্তর্জাতিকতার নিরিখে। যারা পশ্চিমা সাহিত্যের বিবর্তনকে ধনবাদি আধুনিকায়ণ বলে নাক সিটকান তাদের অবগতির জন্য বলতে হয়, যে প্রক্রিয়া পাশ্চাত্যে শুরু হয়েছে অর্ধশতাব্দী আগে, প্রাচ্যে এখন তার অনুকরণ চলছে। অতএব যদি চলমান সময়কে কবিতায় ধারণ করা না যায় তবে হয়তো দু যুগ পরে আজকের কবি এবং কবিতা স্বকীয়তা নিয়ে আলোচনায় আসতে পারবেন না।

বাংলা সাহিত্যের অনেক স্বনামধন্য কবি আছেন যারা বলেন, বর্তমানে কবিতার কিছই হচ্ছে না। প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে তারা কেন কিছু করছেন না। বা করার চেষ্টা করছেন না। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ক্ষণিক পিছন ফিরে তাকালে বেশ কিছু উত্থান চোখে পড়বে। বেশ কিছু আধুনিক কবি তাদের চিত্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে যে চিহ্নতত্ত্ব সংরক্ষণ করে যাচ্ছেন তা নিয়ে হয়তো বিশদভাবে আলোচনা হবে সময়ে-ভবিষ্যতে। কবিতার চিত্রকল্প সব সময়ই গতিশীল। আর কবিরা সেই গতির শক্তি নিয়েই কালের দিকে ধাবমান।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত