বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০ বৈশাখ ১৪৩২
বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫
বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২৩
পানি জীবন, পানিই খাদ্য
ড. মো. আল-মামুন
প্রকাশ: সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩, ৩:৪৯ PM আপডেট: ১৬.১০.২০২৩ ৩:৫৯ PM
জীবজগতের অস্তিত্বে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখছে পানি। মানুষের জীবন ধারনের জন্য অক্সিজেনের পরই পানি দ্বিতীয় উপাদান। মানুষের রক্তে ও কোষে পানি অক্সিজেন ও অনান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে। মানবদেহে ২৫ শতাংশ অক্সিজেন পানি থেকেই আসে। নিয়ম মেনে পানি পান করলে দেহের ওজন কমানো থেকে শুরু করে ক্যানসারের ঝুঁকি পর্যন্ত কমানো সম্ভব। পানির রাসায়নিক ও ভৌত বৈশিষ্ট্য এটিকে অন্যান্য তরলের চেয়ে বেশি পদার্থ দ্রবীভূত করতে সক্ষম। পৃথিবীর সকল প্রকার প্রাণী, গাছপালা, তরুলতা সবাই পানির ওপর নির্ভরশীল। পর্যাপ্ত ও নিরাপদ খাবার পানি মানবাধিকার ধারণার পূর্বশর্ত। বিষাক্ত পানি পান করে রোগ জটিলতায় মৃত্যুবরণ পর্যন্ত ঘটতে পারে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, আগামী দিনে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহই হবে পৃথিবীর অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ। আমাদের পরিবেশগতভাবে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় পানির যথার্থ ব্যবহার এবং পরিচর্যাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে।

পানি শুধু আমাদের তৃষ্ণাই মেটায় না, প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ ক্যালরি খরচ হয় এর ৮০ ভাগই পূরণ করে দেয় পানি। সারাদিন আমরা যত ধরণের খাবার খাই, তার মধ্যে একমাত্র পানিই ক্যালরি, ফ্যাট, শর্করা ও চিনি মুক্ত থাকে। আমাদের জীবদেহ গঠনের একক কোষ-এর প্রোটোপ্লাজমের ৯০ শতাংশ পানি দিয়ে তৈরি। যদি কোনো কারণে দেহে পানির অভাব হয়, তাহলে এই প্রোটোপ্লাজমগুলো কুঁচকে যায় এবং নষ্ট হয়ে যায়। বিপাকীয় কাজগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে, জীব মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। দীর্ঘমেয়াদে পানির অপর্যাপ্ততা নানা জটিলতার সৃষ্টি করে। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই কারণে পানিকে Fluids of lives বা পানির অপর নাম জীবন বলা হয়ে থাকে। তাপ সঞ্চালন, পৃষ্ঠের টান, উচ্চ ফুটন্ত, গলনাঙ্ক এবং আলোকে প্রবেশ করতে দেওয়ার ক্ষমতা পানির অন্যান্য বৈশিষ্ট্য। শক্তি উৎপাদনে পানির প্রয়োজন, আবার পানি সরবরাহের জন্য প্রয়োজন শক্তি। বর্তমানে পৃথিবীর ১৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় পানি-প্রকল্প থেকে। এছাড়া ৮০ শতাংশ শক্তি উৎপন্ন হয় তাপ বিদ্যুৎ থেকে, যা পানি ছাড়া সম্ভব নয়।

পানির অপর নাম মরণও হতে পারে। এক ফোঁটা নোংরা পানিতে পাঁচ কোটিরও বেশি জীবাণু থাকতে পারে। বন্যা এবং খরা বিশুদ্ধ পানির উৎসকে ধ্বংস করে দেয়, যার ফলে কলেরা, ডায়রিয়া এবং টাইফয়েডের মতো বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের ব্যাপক বিস্তার ঘটছে। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত গবেষণা মতে, পাইপলাইনের পানির ৮০ ভাগেই ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। পুকুর ও টিউবওয়লের পানিতেও এই ক্ষতিকর অনুজীবের অস্তিত্ব মিলেছে। পাকস্থলি ও অন্ত্রের প্রদাহের জন্য ই-কোলাই ব্যাকটরিয়াকে দায়ী করা হয়। জৈব ও অজৈব দূষকযুক্ত পানি পান করলে চর্মরোগ, যকৃত বিকল, কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হওয়া, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, কার্সিনোজেন, ফুসফুসের কার্যকারিতা ধ্বংস হতে পারে। ভারী ধাতু মিশ্রিত পানি পান করলে দেহের এনজাইমের কার্যকারিতা নষ্ট, মস্তিষ্ক ও হাড়ের ক্ষয় এবং পঙ্গুত্ব হতে পারে। শুধুমাত্র পানি দূষণের কারণেই প্রতিদিন বিশ্বে প্রাায় ১৪০০ এর বেশি এবং বাংলাদেশে প্রায় ৮০ জন লোকের মৃত্যু হয়।  

ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও অন্যান্য চাহিদা মিটাতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ছে। বাংলাদেশে কৃষিকাজে ব্যবহৃত মোট পানির ৭৮ ভাগ পানি হচ্ছে ভূগর্ভস্থ। বিএডিসির গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকার পানির স্তর সমুদ্রপৃষ্ঠের ১৬০ ফুট নিচে নেমে গেছে। বাংলাদেশের ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৭০ ভাগ অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ মিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত। এতে বন্যার আশঙ্কা প্রবল। যার প্রভাবে প্রায় তিন হাজার মিলিয়ন হেক্টর জমি স্থায়ীভাবে হারিয়ে যেতে পারে এবং সার্বিক উৎপাদন শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ কমে যেতে পারে। উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে লবণাক্ততা আর উত্তরের জেলাগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের পানি সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিস্তা ও ফারাক্কা বাধ বাংলাদেশের উওর ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল ক্রমবর্ধমান মরুকরণের দিকে ধাবিত হওয়ার মূল কারণ। পানির অভাবে সেসব অঞ্চলে চাষাবাদের ধরনও পরিবর্তন হয়েছে।

পৃথিবীর মোট জলভাগের প্রায় ৯৭.৩ ভাগ হচ্ছে লোনাপানি আর বাকি ২.৭ ভাগ হচ্ছে স্বাদু পানি। বিশ্বে স্বাদু পানির প্রায় ৬৯ ভাগ রয়েছে ভূগর্ভে আর ৩০ ভাগ মেরু অঞ্চলে বরফের স্তূপ হিসেবে জমা আছে এবং মাত্র ১ ভাগ আছে নদী ও অন্যান্য উৎসে। ভূগর্ভস্থ পানি অধিক উত্তোলনের কারণে প্রাকৃতিক পানি সম্পদের উপর প্রতিনিয়ত চাপ বাড়ছে। এই চাপ মোকাবিলায় নদী অববাহিকায় উজানের দেশগুলো কৃষি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহারে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি সংরক্ষণের জন্য গড়ে তুলছে বিশালাকার বাঁধ বা ড্যাম। উজানের দেশগুলোর বাঁধ নির্মাণের কারণে ভাটি অঞ্চলের দেশগুলোতে পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে। যার চরম খেসারত দিচ্ছে নিচু অঞ্চলকে। এছাড়াও নদীগুলোতে পলি জমা হয়ে নাব্যতা কমে যাওয়ার কারণে পানি  প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্বের ২৭৬টি নদী অববাহিকার পানি সীমান্ত অতিক্রমী এবং বিশ্ব জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের প্রাথমিক পানির উৎস সীমান্ত-অতিক্রমী এসব নদী। বিশ্বে সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে হলে, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক ও সহযোগিতাময় পরিবেশ থাকা জরুরি।

পানির সংকট একটি বৈশ্বিক সংকট। পরিবেশ বিপর্যয়, বিশ্বায়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত শিল্পায়ন, নগরায়ণ, পানি দূষণ ও অপচয় হলো পানি সঙ্কটের অন্যতম কারণ। এছাড়া যথাযথ অবকাঠামোর অভাব এবং জোরপূর্বক অভিবাসন বা শরণার্থী সংকটও পানি সংকটের জন্য দায়ী। মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে এ সংকট। ওয়াটার এইড-এর গবেষণা মতে সুপেয় পানি পাচ্ছে না দেশের প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। নিরাপদ পানির অধিকারবঞ্চিত বিপুল জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই চরম দরিদ্র। সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে নারী ও শিশুরা। ২০৩৫ সালে বিশ্বে পানির চাহিদা ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৫০ সালে চরম পানি সংকটে পড়বেন বিশ্বের ৫০০ কোটি মানুষ। এত বিপুল চাহিদার জোগান নিয়ে আতঙ্কে আছে উন্নত বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া তাদের জ্বালানি উৎপাদনে প্রয়োজনীয় পানির সংকটে পড়তে পারে। 

ক্রমবর্ধমান পানির সংকট বিশ্বব্যাপী চরম অস্থিরতার সৃষ্টি করতে পারে। বিজ্ঞানীরা পানির সংকটের পেছনের প্রধান কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে আখ্যায়িত করেছেন। মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফের স্তূপ গলে সমদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে লোনাপানির প্রবেশ বাড়ছে। এছাড়াও ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক, পারদ, লোহা, ক্রোমিয়াম, নাইট্রেট, ফ্লোরাইড ও অন্যান্য ধাতব পদার্থ ও দূষক ইত্যাদিও বিশুদ্ধ পানি সংকটের অন্যতম কারন। বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে সঙ্কট সমাধানে পুরো বিশ্বে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে চিন্তার সময় এখনই। এছাড়া ভূগর্ভস্থ পানিসম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে নয়তো অচিরেই বিশ্ব এমন এক ভয়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত হবে যেখানে বন্দুক, মিসাইল কিংবা পারমাণবিক বোমা নয়, পানিই হবে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি, যেটি আগামী শতকে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। ২০১১ সালে মিসরে খাদ্য শস্যের উৎপাদনে ব্যাপক বিপর্যয়ের কারণে সরকারের বিরুদ্ধে যে গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছিল, তার কারণও ছিল পানি সংকট। অতিরিক্ত খরার কারণে সাব-সাহারার আফ্রিকার ৮০ শতাংশ কৃষিজমি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এবং সমুদ্রের লবণাক্ত পানির স্তর বৃদ্ধির ফলে, বিভিন্ন উৎসের পানি পানের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ইউনিসেফের গবেষণা অনুযায়ী, বছরজুড়ে বিশ্বের অন্তত ৭৬ কোটি মানুষ প্রচণ্ড পানি সংকটে ভোগে যার মধ্যে তিন জনের এক জনই ভারতে। ভারতের ১৩০ কোটি জনসংখ্যার অন্তত ৪০ শতাংশ মানুষের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে খাওয়ার পানির নির্ভরযোগ্য কোনো উৎসের সুযোগ থাকবে না। চীনেও রয়েছে পানির ব্যাপক সংকট। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় ভূগর্ভস্থ পানির ৭০ শতাংশই মানব স্বাস্থ্যের অনুপযোগী। এছাড়া পাকিস্তান, মিশর, মেক্সিকো, সৌদি আরব ও ইয়েমেনও এই সংকটপূর্ণ দেশের তালিকায় আছে। 

জলবায়ু বিষয়ক জাতিসংঘের প্যানেলের গবেষণা বলছে, প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ২০ ভাগ বিশুদ্ধ পানি কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি সংস্থাটি সারাবিশ্বের জন্য অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতাকে। ল্যাটিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় পানির প্রবল ঘাটতি আঞ্চলিক সংঘাতকে উসকে দিচ্ছে। আমেরিকার ওয়াটার ওয়ার্কাস অ্যাসোসিয়েশন তাদের সর্বশেষ গবেষণায় জানিয়েছে, মধ্যপ্রাাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে রয়েছে পানি সম্পদের বিপর্যয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে দেশে পানির স্বল্পতা ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিবাদ বিশ্বে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনতে পারে এবং এ কারণে নিরাপদ সুপেয় পানি প্রাপ্তি হবে আগামী বিশ্বের বড় চ্যালেঞ্জ। সুপেয় পানির পরিমাণই যেখানে দিনকে দিন কমছে, সেখানে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো এই নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি সম্পদের জন্য লড়বেন শীঘ্রই, সেটা নিশ্চিত।

পানি ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ব্যবস্থা হচ্ছে পানির পুনঃব্যবহার এবং সমুদ্রের পানি নির্লবণীকরণ। এই পদ্ধতি বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। মধ্যপ্রাাচ্যের কাতার, ইজরাইলসহ আরো অনেক দেশ সমুদ্র থেকে লবণ পানি তুলে পরিশোধন করে নিয়ন্ত্রিত চাষাবাদ করছে। জাপানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য দুই ধরনের পানি ব্যবহার করে। সেখানে সরকারি বিধান অনুযায়ী সকল আবাসিক-অনাবাসিক, সরকারি-বেসরকারি ভবনে পানীয় পানির জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হয় এবং অন্যান্য ব্যবহারের জন্য অপর লাইনে ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবহার করা হয়। অনেক ভবনে ব্যবহৃত ভূপৃষ্ঠের পানি ফিল্টার করে পুনঃব্যবহার করার ব্যবস্থা থাকে। এছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে, ফিল্টার করে পানীয় পানি হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের ১৭ টি লক্ষ্যের মধ্যে ৬ নম্বরটি সুপেয় পানি নিয়ে যা ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে। বৈশ্বিক পানি সংকট মোকাবেলা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য পানি, খাদ্য ও পরিবেশগত নিরাপত্তা অর্জন ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ নিরাপদ পানি প্রাাপ্তিকে মৌলিক অধিকার ঘোষণা করার পরও বিশ্বের ৭৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ এ সুবিধা থেকে এখনো বঞ্চিত, আর বাংলাদেশে এ সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লাখ। অনিরাপদ পানীয় জলের কারণে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ইউনিসেফ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী নিরাপদ পানির সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দুই-তৃতীয়াংশের বসবাস ১০টি দেশে, যার মধ্যে চীন, ভারত, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তানজানিয়া, পাকিস্তান, কেনিয়া ও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য।

পানি ছাড়া মানব অস্তিত্ব অসম্ভব। আর্ন্তজাতিক আদালত ও বিভিন্ন দেশের স্থানীয় আদালত পানিকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জলবায়ু সংকট আরো প্রবল হলে বৈশ্বিক সুপেয় পানির সংকট আরো বহু গুণে বেড়ে যাবে। দেশের কাক্সিক্ষত টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিশুদ্ধ পানির অধিকার প্রতিষ্ঠায় এখন থেকে পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানি শুধুমাত্র পানীয় পানি হিসাবেই ব্যবহার করা উচিত। বৃষ্টিপ্রধান এদেশে বর্ষা মৌসুমে পানিকে অবশ্যই ধরে রাখার পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে এসব উদ্যোগের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। বিশুদ্ধ পানির উৎসগুলো রক্ষা এবং জনগণকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের অঙ্গীকার সামনে রেখে সরকারকে আগামীদিনের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে প্রয়োজন পানির টেকসই ব্যবহার।

লেখক : কৃষিবিদ ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রজনন বিভাগ, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত