২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার অজপাড়াগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা-মা, ভাইবোন নিয়ে সাধারণত আমাদের পরিবার। শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত তাঁর পরিবারের দীর্ঘজীবী মানুষ। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে তাঁর বেঁচে থাকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হোক, লেখার শুরুতে এই প্রত্যাশা করছি।
জননেত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতিতে কয়েক প্রজন্মের অভিজ্ঞতার ধারক। এ ধরনের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সান্নিধ্যে কাজ করতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আজ বাংলাদেশ বিশ্বসভায় যখন মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয় তখন এর ক্রীড়নক হিসেবে আমাদের চোখের সামনে একটি মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে, বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত হয় তখন আমাদের গর্বের প্রতীক হিসেবে এক ব্যক্তিত্ব হাজির হয়, আজ সারা বিশ্ব যখন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে খোলনলচে বদলে যাওয়া এক মানবিক বাংলাদেশকে মূল্যায়ন করে তখন আমাদের হৃদয়ের মানসপটে প্রতিভাসিত হয় এক মানবিক নেতৃত্বের। এই সবকিছুর সম্মিলিত যোগফল হলো বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। মাত্র সাড়ে ৩ বছরে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছিলেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে রোধ করার জন্য মানব সভ্যতার ইতিহাসের ঘৃণিত শত্রু, খুনি-ঘাতক চক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। এখানে বলতে গেলে বলতে হয়, কী দ্যুতিময় ছিল বঙ্গবন্ধুর উত্থান! যেন বাংলার পূর্বাকাশে উদিত একমাত্র সূর্য। যে সূর্যের আলোকপ্রভা সমগ্র বাংলা ও বাঙালিকে আলোকিত করেছিল। অন্যদিকে কী নির্মম-নিষ্ঠুর ও বেদনাবহ ছিল তাঁর হত্যাকাণ্ড! যেন ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা অশুভ শক্তির প্রতিভূরা জাতির পিতাসহ আমাদের সকল আশা-আকাক্সক্ষাকে কেড়ে নিয়েছিল। ফলশ্রুতিতে, প্রবল ও প্রচ্ছন্ন অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি। সেই সময় রাজনীতিকে আচ্ছন্ন করেছিল ধূসরতা। সেই ধূসরতার সময়ে মানুষের চেহারাও বিবর্ণ রূপে চিত্রিত হয়েছিল। রাজনীতিকরা হয়ে গিয়েছিল পলায়নপর ও বর্ণচোরা। ব্যতিক্রম কতিপয় দূর্বাঘাসের মতো মাটি আঁকড়ে পড়েছিল। রাজনীতিতে দুর্নীতি হয়ে উঠেছিল অবজেক্ট। আর জনকল্যাণের কথা ছিল যেন পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ক্যানভাসারের উক্তি। রাজনীতির সেই ঊষর সময়ে নতুনভাবে পাটাতন বিনির্মাণে নিরলস সংগ্রাম করে গেছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা। রাজনীতি বাধাগ্রস্ত না হলে নাকি তার উন্মেষ ঘটে না। সীমাবদ্ধতার চৌহদ্দি টপকিয়ে সেই বাধাগ্রস্ত জনগণতান্ত্রিক রাজনীতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা দেখান শেখ হাসিনা। জনগণতান্ত্রিক রাজনীতির ম্যানুফেস্টো নিয়ে রাজনীতির বন্ধুর পথ হেঁটে তিনি স্বৈরশাসকের দুর্ভেদ্য দেয়াল ভেঙেছেন। অনুর্বর সেই সময়ে তিনি এসেছিলেন স্বর্গীয় অবতার হয়ে। বাংলার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের পাশাপাশি মৌলিক অধিকার প্রাপ্তির সীমারেখাকে বিস্তৃত করতে চারণের বেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। নিষ্ক্রিয় রাজনীতিকে জীবন্ত করে তোলেন তিনি। বিষাদের বালুচরে প্রশান্তির ঢেউ তোলা নেতৃত্বের নাম শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা গতানুগতিক পথে রাজনীতি করেননি। তিনি রাজনীতিতে নতুন পথ নির্মাণ করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তিনি কর্ম দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করা রাজনীতিবিদ। আয়নার পরিবর্তে মানুষের হৃদয়ে যার দৃষ্টি। রাজনীতিতে তিনি মানুষের হৃদয়ের কথাই বলতে এসেছেন। রাজনীতির মানচিত্রে শেখ হাসিনা তাঁর সার্বভৌমত্ব নির্ণয় করে নিয়েছেন। দেশের রাজনীতিতে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি সংযোজন করেছেন নতুন ভাষা ও স্বর। অন্যদিকে সরকারে এসে জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে নির্মাণ করে চলেছেন একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি। রাজনীতি শুধু নীতিতে আবদ্ধ না রেখে সেটিকে তিনি জড়িয়েছেন অনুভবে, অস্তিত্বে ও সত্তায়। রাজনীতি তাকে বেদনাহত করলেও তিনি রাজনীতিকে পূর্ণতাদানে বদ্ধপরিকর ছিলেন। শূন্য বুকে তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে বাঙালির অখণ্ড সত্তায় মিলে গিয়ে নিজের হারানোর বেদনা ভুলতে চেয়েছেন। নদীবিধৌত পলল মাটিতে শত শত বছর ধরে প্রবহমান রাজনীতির ধারাকে তিনি করেছেন সমৃদ্ধ এবং নিজেকে গড়ে তুলেছেন নতুন দিনের দিশারী রূপে।
আজ জাতীয় সীমানা পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিশ্ব পরিমণ্ডলে সুদৃঢ় স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। জাতিসংঘে সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা উত্থাপিত ‘শান্তি, ন্যায়বিচার ও উন্নয়নের জন্য জনগণের ক্ষমতায়নের মডেল’ রেজুলেশন আকারে গৃহীত হয়। শেখ হাসিনার মস্তিষ্কপ্রসূত ‘কমিউনিটি ক্লিনিক সার্ভিস’ রেজুলেশন আকারে শুধু স্বীকৃতই নয়; বরং ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে আখ্যায়িত হয়। গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সংকট সমাধানে তিনি নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার মতো বৈরী পন্থা বন্ধের জন্য বিশ্বনেতৃবৃন্দের প্রতি দ্ব্যর্থহীনভাবে আহ্বান জানান। একইভাবে এ বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনি সর্বজনীন ও পূর্ণাঙ্গ নিরস্ত্রীকরণে, ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকার আদায়ে এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
কিছু দিন আগে একজন বন্ধুতুল্য রাজনৈতিক সহকর্মীর সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। সে আমাকে প্রশ্ন করলো, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামক দলটিকে যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, উনার অনুপস্থিতিতে এই দায়িত্ব পালনকারী নেতৃত্ব কে হতে পারে? আমি সরাসরি তার প্রশ্নের উত্তরে না গিয়ে বললাম, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিতে দিতে বাঙালি জাতির স্বপ্নবাহকে পরিণত হয়েছেন। বিষয়টা হলো, শেখ হাসিনা আছেন বলেই আমাদের স্বপ্নরা জাগ্রত ও রঙবেরঙের, শেখ হাসিনা আছেন বলেই আমাদের ইচ্ছেরা প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়ায়। অর্থাৎ শেখ হাসিনা আমাদের ভিন্ন ভিন্ন চোখে দেখা রঙবেরঙের স্বপ্নের উৎসকেন্দ্র। আমাদের স্বপ্নগুলোর অক্সিজেন। যা থাকলে বুঝা যায় না। অনুপস্থিতিতে প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় প্রকটভাবে। সুতরাং যদি প্রশ্ন করা হয়, শেখ হাসিনা না থাকলে কী হবে? আমাদের সবার চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসবে। আমাদের বর্ণিল স্বপ্নগুলো হারিয়ে যাবে শূন্যতার কৃষ্ণগহ্বরে। এই পার্থক্য নির্ণয়কারী নেতৃত্ব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর বাঙালি জাতির অখণ্ডিত মূল্যবোধের প্রতীক ও অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনা। সুতরাং শেখ হাসিনার কোনও বিকল্প নেতৃত্ব এখনও গড়ে ওঠেনি।
লেখক : অ্যাডভোকেট, উপ-দফতর সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ