মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫ ৯ বৈশাখ ১৪৩২
মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫
মা ইলিশ রক্ষায় সোচ্চার হই
সুধীর বরণ মাঝি
প্রকাশ: সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৩, ৩:০৮ PM
আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। ভাত ও মাছ আমদের প্রধান খাদ্য। ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। বাঙালিদের আতিথিয়তায় ইলিশ এক অনন্য ভূমিকা পালন করে। একলক্ষ ইলিশে তেইশ লক্ষ ডিম। ইলিশ প্রজনন মৌসুম ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষার অভিযান শুরু হয়েছে। আমরা মা ইলিশ রক্ষার এই অভিযানের সফলতা কামনা করি। ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি ও মজুত নিষিদ্ধি করেছে সরকার। রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে মা ইলিশ রক্ষা করার অভিযানকে সফল করতে হবে যে কোন মূল্যে। মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা থাকলেও কিছু অসাধু ব্যক্তির অতিমাত্রার লোভের কারণে গত কয়েক বছর যাবৎ এই পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। আর এই মা ইলিশ রক্ষার অভিযান সফল করতে পারলে দেশের যেমন ইলিশের চাহিদা মিটবে তেমনি বিদেশে ইলিশ রপ্তানির পরিমাণও বাড়বে আসবে বৈদেশিক মুদ্রা। 

ইলিশের পর্যাপ্ত উৎপাদন ধরে লাখতে না পারায় ইলিশ এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ইলিশ এখন সাধারণ মানুষের কাছে একটি স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে মা ইলিশ এবং জাটকা রক্ষার অভিযান সফল না হওয়ায় ইলিশে উৎপাদন অনেক কমে গেছে  এবং গত বছর ও চলতি বছরে  ইলিশ মৌসুমেও ছিল ইলিশের  আকাল এবং জেলেদের হাহাকার। দুঃখের কথা, শত কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার দিল মা ইলিশ রক্ষার অভিযান আর এখন দেখি জেলেদের মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব। অভিযানের প্রথম এক সপ্তাহ অভিযান জোড়ালোভাবে পরিচালিত হলেও পরের সপ্তাহ থেকে জেলেরা স্থানীয় প্রশাসন, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং নেতাদের ম্যানেজ করেই জেলেদের মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব। জেলেরা একবারও আগামীদিনের কথা একবারের জন্যও না ভেবেই তারা নির্বিচারে মা ইলিশ নিধন করে চলছে। 

যা অনেকটাই নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারার মতো। মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে জেলেদের মা ইলিশ নিধনের উৎসব  সাধারণ মানুষের মনে উদ্বেগ  তৈরি হয়েছে, মা ইলিশ রক্ষার অভিযান সফল  হবে তো ?  জেলেরা কেন নিজেরাই নেজেদের ক্ষতি করছে? কেন তারা নির্বিচারে তাদের আগামীর রুটিরুজি, জীবন-জীবীকাকে এইভাবে হত্যা করে চলছে? আর কর্তৃপক্ষ কেন-ই বা এতো উদাসীনতা? জেলেরা শুধু রাতে আঁধারে নয় দিনের আলোতেই মা ইলিশ ধ্বংসের নগ্নতায় মেতে উঠেছে।  যা আমাদের সাধারণের মানসিক যন্ত্রণা বৃদ্ধি করে চলছে। জেলেরা মা ইলিশ রক্ষার অভিযানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। জেলেরা আগামীর সম্ভবনা এবং জীবন-জীবীকার নিশ্চয়তা না ভেবেই এক ধরনের অন্ধ ধারণার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। জেলেরা যেহেতু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ নিধন করছে। তাহলে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান কি নামমাত্র? জেলেরা নির্বিচারে মা ইলিশ নিধন করে চলেছে। যেনো দেখার কেউ নেই। রাষ্ট্রের, পরিবেশের, অর্থনীতির ক্ষতি করে চলছে জেলেরা মা ইলিশ নিধনের মধ্য দিয়ে। জেলেদের আচরণ দেখলে মনে হয় মা ইলিশ রক্ষার অভিযানটি আসলে মা ইলিশকে নিধনের উৎসব। 

মা ইলিশ নিধনের মধ্যামে শুধু জেলেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, সর্বনাশ হচ্ছে দেশেরও। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা মেতে উঠেছে ইলিশ নিধনে।  এই জেলেরা কি  রাষ্ট্র কিংবা প্রশাসনের চেয়ে অধিক ক্ষমতাধর নাকি প্রশাসনের দুর্বলাতায় জেলেরা এই হীন কাজে মেতে উঠে। মা ইলিশ রক্ষার অভিযান চলাকালীন সময়ে জেলেদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং অতিলোভী জেলেরা বিশেষ করে ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, শরিয়তপুর, মাদারিপুর, লহ্মীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মাওয়া, গজারিয়া, চাঁদপুরের মতলব, রাজরাজেশ্বর, হাইমচর, কাটাখালী, চরভৈরবী, ফেরিঘাট, ঈশানবালাসহ আরো কিছু কিছু এলাকায় দিনের আলোতে এবং রাতের আধাঁরে অনেকটা প্রশাসনের নাকের ডগায় অবাধে নিধন করে যাচ্ছে মা ইলিশ এবং ডিমওয়ালা ইলিশ। বর্তমান সময়েও এই দৃশ্য চোখে পড়বে না বলে আমরা বিশ্বাস রাখি। কঠোরতা, জবাবদিহিতা এবং সচেতনতার বিকল্প নেই। মা ইলিশকে যদি প্রজনন মৌসুমে রক্ষা করতে না পারি তবে ইলিশ আর নদীতে পাওয়া যাবে না, ইলিশ পাওয়া যাবে যাদুঘরে।

ডুবো চর এবং ভাসমান চরের কারণে নদীতে ইলিশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে মায়ানমারে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীদূষণ ও দখল ইলিশসহ মিঠা পানির অন্যান্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিও ক্ষেত্রে বড় বাধা। ইলিশসহ মিঠা পানির অন্যান্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নদী দূষণ রোধ এবং নদীকে দখলমুক্ত রাখতে হবে।  কিছুদিনের নৌকাবিহীন নদী যা হবে আগামীদিনের মাছে পূর্ণ নদী। মা ইলিশ এবং ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষার মধ্য দিয়ে আমাদের ইলিশের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং এতে জেলেদের মাঝে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিলে আসবে। মা ইলিশ রক্ষার অভিযানকে সফল করতে হলে প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে, মা ইলশ রক্ষায় গৃহীত পদক্ষেপের কঠোর হস্তে সফল বাস্তবায়ন করতে হবে। অভিযানে কেউ যেন কোনো প্রকার সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে সেদিকে প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদেরকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি আামাদের নৌবাহিনী, সেনাবাহিনীকেও ইলিশ রক্ষার অভিযানকে সফল করার জন্য কাজে নিয়োজিত করা যেতে পারে। মা ইলিশ রক্ষার অভিযানের সময় আমাদের জলসীমায় য়েন ভারতীয় জেলেরা অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেইদিকে সজাগদৃষ্টি এবং উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

সর্বোপরি, আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই মা ইলিশকে রক্ষ করতে হবে। রক্ষা করতে পারলে মা ইলিশ মিটাবে চাহিদা, মিলবে অর্থ। তাই আসুন মা ইলিশ রক্ষায় সকলেই সোচ্চার হই, এগিয়ে আসি। প্রশাসনিক কঠোরতা এবং স্বচ্ছতাই পারে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানকে সফল করে তুলতে।

লেখক : শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাইমচর, চাঁদপুর

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত