উত্তাল সাগরের মাঝে দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে সমুদ্র নগরী কক্সবাজারে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ১৫১টি প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় সমুদ্রে। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এর আগে মণ্ডপগুলোতে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ-উৎসব। হিন্দু সধবা নারীরা প্রতিমায় সিঁদুর পরিয়ে দেন, নিজেরা একে অন্যকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। চলে মিষ্টিমুখ, ছবি তোলা আর ঢাকের তালে তালে নাচ-গান। এবারও প্রতিমা বিসর্জনের জন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। মঙ্গলবার ( ২৪ অক্টোবর) বিকেলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার শেষ দিন বিজয়া দশমীতে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ।
আয়োজকরা জানান, শুধুমাত্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ১৫১টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখাল নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর ও নাফনদী, উখিয়ার ইনানী সৈকত ও রেজুনদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। রামু ও চকরিয়ায় পৃথক প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান করা হয়েছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল কর বলেন, এবার জেলা ও উপজেলা থেকে আসা ১৫১টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। তবে ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় আমরা অনুষ্ঠান সীমিত করেছি। আমরা মা দুর্গার কাছে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মানুষ যেন রক্ষা পায় সেই প্রার্থনা করেছি।
এদিকে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানকে ঘিরে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দুপুর ২টার পর থেকে জেলার উখিয়া, টেকনাফ, সদর, ঈদগাঁও, চৌফলদন্ডী ছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা আসতে শুরু করে। প্রতিমায় ভরে যায় অনুষ্ঠানস্থল। বিকেল সাড়ে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সৈকতের বালুচরে রাখা দুর্গা প্রতিমা ঘিরে চলে ভক্তদের শেষ আরাধনা। শুধু তাই নয়, নাচে-গানে এক অন্য রকম আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকতে। প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানকে ঘিরে সমাগম ঘটে পর্যটকসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কয়েক হাজার মানুষের।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। সমুদ্রে প্রবেশের মুখে চেকপোস্ট স্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, প্রতিমা বিসর্জনের দিনে সমুদ্র সৈকতে অনেক মানুষের সমাগম হয়েছে। বিচের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। পাশাপাশি ওয়াচ-টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হেল্প ডেস্ক রয়েছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভূজা দেবী মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ পৃথিবীতে আসেন। আর দশমার দিন বিসর্জনের মাধ্যমে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয় তাকে। দেবীর আগমন ও প্রস্থানের মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত মাঝের পাঁচদিন নানা আয়োজনে চলে দুর্গোৎসব।