বিসিসির বৈধতা দেয়ার পরেও বরিশাল নগরীতে হাজার হাজার থ্রি-হুইলার ও ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি ছাড়া এতে নগরজুড়ে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়ছে বাসিন্দারা। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা আর বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) রাজনৈতিক ফায়দা নিতে অবৈধ যানবাহনকে বৈধতার মোড়কে আবৃত করার চেষ্টায় এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, পৌরসভা থেকে ২০০২ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর থেকে এ অবধি ২ হাজার ৬১০টি পায়ে চালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া নাগরিকদের ব্যয় ও ভোগান্তি কমাতে প্রথমে ২০০৩ সালে নথুল্লাবাদ থেকে রূপাতলী রুটে বিআরটিসি দ্বিতল বাস সার্ভিস চালু করে। যদিও পরে তা অজানা কারণে ২০০৫ সালে বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়ের মেয়রের নেতৃত্বাধীন পরিষদ থ্রি-হুইলারের প্রতি বেশি আন্তরিক হওয়ায় ওই সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায় বলে জানা যায়। এরপর ২০০৯ সালে সার্ভিসটি পুনরায় চালু করে তৎকালীন মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরন। যা চালু ছিল পরবর্তী মেয়র আহসান হাবিব কামালের পরিষদ পর্যন্ত। যদিও ২০১৩ সালে কামালের আমলেই চূড়ান্তভাবে সেই সার্ভিস বন্ধ হয়ে এখনো চালু হয়নি।
সিটি বাস সার্ভিস চালুর জন্য নগরবাসীর পক্ষ থেকে দফায় দফায় দাবি উঠলেও রহস্যজনক কারণে এ বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি নগর কর্তৃপক্ষ। এমনকি সদ্য বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সময়েও একই দাবি ওঠে। কিন্তু তিনিও সিটি বাস সার্ভিসের প্রতি আগ্রহ না দেখিয়ে পাঁচ হাজার ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক (হলুদ অটো) নগরীতে চলাচলের অনুমতি দেন, কিন্ত অনুমতি দেয়ার পরেও যথাযথ তদারকি না থাকায় অবৈধ থ্রি-হুইলারে ছেয়ে গেছে পুরো শহর।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী। তিনি প্রায় তিন হাজার ইজিবাইক শ্রমিকদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন। তিনি বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রায় ৫ হাজার ইজিবাইককে চলাচলের অনুমতির সাপেক্ষে একটি টোকেন দিচ্ছেন। অথচ সিটি করপোরেশন এই ধরনের যানবাহন চলাচলের লাইসেন্স দেওয়ার কোনো এখতিয়ার রাখেন না। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের খসড়া নীতিমালা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বিআরটিএ। নীতিমালাটি এখন আইনের সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়ার অপেক্ষা। বাংলাদেশের যত গাড়ি চলে তা ১৯৮৩ সালের মটরযান অধ্যাদেশের অনুকূলে চলে। যাতে ইজিবাইক সর্ম্পকে কোনো নির্দেশনা নেই। কারণ তখন ইজিবাইক ছিল না। ইজিবাইকের নীতিমালা আইনের সঙ্গে যুক্ত করা হলেই বিআরটিএ লাইসেন্স দিতে পারে।
সৌরভ নামে একজন ইজিবাইক চালক বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে সিরিয়াল দিয়ে টোকেন নিয়েছিলাম। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে তাতে কাজ হবে না। তাদের কথামতো না চললে গাড়ি জব্দ করবে। আমরা আছি মহা বিপদে, কার কথা শুনবো? সিটি করপোরেশন নাকি ট্রাফিক পুলিশ নাকি বিআরটিএ? চার বছর ধরে আমি হলুদ অটো চালাই। চার বছর আগে শহরে ৫ হাজার গাড়ি থাকলে এখন আছে অন্তত ১৫ হাজার। কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বেসামাল হয়ে গেছে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আরবান ডিজাইন এর প্রকৌশলী রুবেল বলেন, শহরটি দিনদিন বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হলুদ অটো (ইজিবাইক), ব্যাটারি চালিত রিকশা, সিএনজি, গ্যাস সিলিন্ডারবাহী নীল অটো, মাহিন্দ্রা (থ্রি-হুইলার) দিন দিন বাড়ছে। সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ কেউ এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে না। এখন নিয়মিতই শহরে যানজট লেগে থাকে তাই নিজেস্ব বৈধতা দেয়া হয়েছে সেগুলো নিশ্চিত করা উচিত।
বিআরটিএ বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জিয়াউর রহমান বলেন, বিআরটিএ বরিশাল শহরে কোনো ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেয়নি। সিটি করপোরেশনে রাজনৈতিক বিবেচনায় ৫ হাজার ইজিবাইককে চলাচলের অনুমতি দিচ্ছেন। এটি অফিসিয়াল কোনো সিদ্ধান্ত না। শহরে অনেক ইজিবাইক চলাচল করছে। সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই তার মত করে অনুমোদন দিয়েছেন। বিআরটিএ বরিশালে এখন পর্যন্ত প্রথম দফায় ১ হাজার ৯২৯টি থ্রি-হুইলার, পরে আরও ৫৭১টি সহ মোট ২৫০০টি গাড়ি চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। এর বাইরে যে-সব গাড়ি চলছে সেগুলো অবৈধ। অবৈধ গাড়িগুলোকে বিআরটিএ ছাড়া কেউ চলাচলের অনুমোদন দিতে পারে না।
এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশনের যানবাহন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল কবিরের বক্তব্য নিতে তার দপ্তরে সোমবার ও মঙ্গলবার দুপুরে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।