প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সোমবার খুলনা সফর করবেন। বিকাল ৩টায় খুলনার ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ ময়দানে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন তিনি। উদ্বোধন করবেন ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের এবং আরও পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। তার সফরকে ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। প্যানা, ফেস্টুন ও তোরণে ভরে গেছে গোটা নগরী। চারিদিকে এখন উৎসবের আমেজ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তার সফর কর্মসূচীতে দেখা যায়, তিনি আগামীকাল সোমবার বিকাল ৩টায় সার্কিট হাউজ ময়দানে ভাষণ দেবেনে। তার আগে পৌনে তিনটায় তিনি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর আগে তিনি ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে দুপুর পৌনে ১টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে নির্মিত হ্যালিপ্যাডে অবতরণ করবেন। এরপর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত সার্কিট হাউজ মিলনায়তেন বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা করবেন। সভা শেষে নামাজ আদায় ও মধ্যহ্ন ভোজের ৪৫ মিনিটের বিরতি শেষে মূল অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন শেখ হাসিনা এবং ৪টা ৪৫ মিনিটে তিনি আবার হেলিকপ্টর যোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে শিল্প, বন্দর ও বিভাগীয় নগরী খুলনায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নগরীর প্রতিটি সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে দুই শতাধিক তোরণ, মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে রং বেরঙের ব্যানার, ফেস্টন, বিলবোর্ড ও প্লাকার্ড। সার্কিট হাউস ময়দানের আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে নিচে নৌকা ও উপরে পদ্মা সেতুর আদলে ১৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের সুবিশাল মঞ্চ। এই মঞ্চে অন্তত ৪০০ জন অতিথি বসতে পারবেন। মঞ্চের উচ্চতা সাড়ে ১৩ ফুট।
প্রধানমন্ত্রীর খুলনায় আগমন ও সার্কিট হাউস মাঠের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তিনস্তরের কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে। এরমধ্যে রয়েছে মহাসমাবেশস্থল, মহাসমাবেশ স্থলের আশেপাশে এবং মহাসমবেশ স্থলের বাইরে।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আবেফীন জানান, বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া উন্নয়ন প্রকল্প কাটছাট করে ২৯ প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হয়। এগুলোর সব কয়টি অনুমোদন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরমধ্যে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান ২৪টি প্রকল্প এবং ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো পাঁচটি প্রস্তাবিত প্রকল্প রয়েছে।
তিন স্তরের কঠোর নিরাপত্তাবলয়
প্রধানমন্ত্রীর খুলনায় আগমন ও সার্কিট হাউস মাঠের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তিনস্তরের কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুলনায় আগমন ও সার্কিট হাউস ময়দানের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে তিনস্তরের কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, পোশাক ও সাদা পোশাকে মহাসমাবেশস্থল, মহাসমাবেশস্থলের আশেপাশে পোশাক ও সাদা পোশাকের এবং মহাসমবেশস্থলের বাইরে মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ ও র্যাবের সমন্বয়ে নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে মহাসমাবেশস্থলে নারী-পুরুষসহ লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হবেন-তাদের সার্বিক নিরাপত্তায় সার্কিট হাউস ময়দান ও আশপাশ এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন।
কেন্দ্রীয় নেতাদের শেষ প্রস্তুতি পরিদর্শন
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থালের সর্বশেষ প্রস্তুতি পরিদর্শন করেছেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন এবং খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। এসময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ও বি এম মোজাম্মেল হক, নগর শাখার সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক, সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারীসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাথে ছিলেন। নেতারা সমাবেশের মঞ্চ ও নেতাকর্মীদের জড়ো হওয়ার যায়গা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন করেন আশপাশের এলাকাও।
এসময় সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল বলেন, দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক কিছু দিয়েছেন। তাই তাকেও আমাদের অনেক কিছু দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। জনসভােেক জনসমুদ্রে পরিণত করে আমরা সেটি দেখিয়ে দিতে চাই। এই অঞ্চলের মানুষ তার সাথে ছিলো এবং আগামীতেও থাকবেন।
আর শেখ হেলাল উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পর খুলনার জনসভা হবে সর্ববৃহৎ জনসভা। যেখানে সরকার প্রধান ও দলীয় প্রধান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উন্নয়ন নিয়ে কথা বলবেন। দেবেন আগামী দিনের জন্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যও। রাজপথে থেকে কিভাবে বিরোধী দলের জ্বালও পোড়াও কর্মসূচী মোকাবিলা করা হবে সে নির্দেশনাও দেবেন তিনি।