মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫ ৯ বৈশাখ ১৪৩২
মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫
ডিপিডিসিতে বিদ্যুৎ চুরি রোধ ও বকেয়া আদায়ে প্রশংসনীয় উদ্যোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩, ৫:১৯ PM আপডেট: ১৮.১১.২০২৩ ৭:০৫ PM
ডিপিডিসির স্পেশাল টাস্কফোর্স পরিচালনার মাধ্যমে ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় গ্রাহক আঙ্গিনায় গিয়ে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা উদঘাটন, আলামত সংরক্ষণ, ছবি ধারণ, সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণসহ  বিদ্যুৎ সংক্রান্ত অনিয়ম রোধ করা ও  বিদ্যুৎ  চুরির ফলে লসকৃত রাজস্ব পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে।  

বিগত কয়েক বছর যাবৎ ডিপিডিসির আওতাভুক্ত এলাকায় প্রচুর অভিযান পরিচালনা করে প্রচুর বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা উদঘাটন করা হয়েছে এবং ব্যাপক পরিমানে চুরিকৃত এনার্জি ইউনিট পুনরুদ্ধার করা হয়েছে যা সরকারী রাজস্ব আদায়ে গুরুতপূর্ন অবদান রেখে চলেছে। ফলশ্রুতিতে, যেখানে কিছু এনওসিএস দপ্তরে বিদ্যুৎ চুরি অবাধে চলত সেখানে বিদ্যুৎ চুরি ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়েছে এবং একই সাথে সিষ্টেম লস হ্রাসসহ ডিপিডিসি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। এর ফলে গ্রাহক সচেতনতা পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রাহকের মধ্যে বিদ্যুৎ চুরির প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে, গ্রাহক স্বপ্রনোদিত হয়ে টাস্কফোর্স টীমের নিকট তথ্য প্রদান করছে এবং একই সাথে উক্ত অনিয়মের সাথে জড়িত দালাল কিংবা মিটার রিডারদের ব্যাপারে গ্রাহকরা সতর্কও হয়েছে। 

প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের মিটার পর্যবেক্ষণ এবং গ্রাহক স্থাপনা পরিদর্শনের ফলে স্পেশাল টাস্কফোর্স টীমের কারিগরি এবং গনসংযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মিটারে অনেক ধরনের সূক্ষ টেম্পারিং এবং বাইপাস হয়, যা সহজে উদঘাটন করা কঠিন- এ ধরনের সূক্ষ অনিয়ম/চুরি স্পেশাল টাস্কফোর্স টিম তাদের মেধা ও দক্ষতার সাথে উদঘাটন করছে। একই সাথে প্রচুর অবৈধ মিটারও জব্দ করা হয়েছে। যা ইতোপূর্বে হয়নি। সার্বিকভাবে এসকল উদ্যোগ অভারঅল সিস্টেম লস কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

যেসকল এনওসিএস দপ্তরের তুলনামূলক ঝামেলাপূর্ণ বিদ্যুৎ চুরির বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়, সেসব স্থাপনায় টাস্ক ফোর্স কর্মীরা অতিদ্রুত অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। ফলস্বরূপ, স্পেশাল টাস্কফোর্সের ওপর এনওসিএস দপ্তরসমূহের আস্থা এবং নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে গ্রাহককে সরাসরি বিদ্যুৎ চুরি করতে সহায়তা করার অপরাধে ইতোমধ্যে কাস্টমার সাপোর্ট সার্ভিসের আওতায় আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে ঠিকাদার কর্তৃক নিয়োগকৃত ৬৮ জন কর্মীকে অপসারণ এবং ডিপিডিসির ৭ জন এমপ্লয়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হয়েছে। বহিরাগত দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে এরুপ অনেক দালালদের বিরুদ্ধে এনওসিএস দপ্তরের মাধ্যমে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বিইআরসি-এ স্পেশাল টাস্কফোর্স কর্তৃক উদঘাটিত বিদ্যুৎ চুরিসংক্রান্ত মামলার শুনানীতে অংশগ্রহনের সময় মিটার পর্যবেক্ষণ, কারিগরী বিশ্লেষণ, যৌক্তিক তথ্য উপাত্ত প্রদান এবং উপস্থাপনের ফলে বিইআরসির কাছে স্পেশাল টাস্কফোর্স তথা ডিপিডিসির সুনাম এবং গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে বিদ্যুৎ চুরিসংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে স্পেশাল টাস্কফোর্স কর্তৃক প্রদত্ত তথ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারছে। 

গত ৩ বছরে প্রায় ৪৮ লাখ এনার্জি ইউনিট বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে যার বিপরীতে প্রায় ১৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। ডিপিডিসির ইতিহাসে এটা একটা রেকর্ড।

এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০০ মিটার পরিদর্শন করে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং বিদ্যুৎ চুরির দায়ে ৩৫ জন গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে যা বর্তমানে চলমান। 

এছাড়া স্পেশাল টাস্কফোর্স টিম গনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনার সময়ে সংশ্লিষ্ট স্থাপনার এবং এর আশেপাশে অন্যান্য স্থাপনার গ্রাহকগনকে বিদ্যুৎ  চুরি, বিদ্যুতের দালাল এবং দুর্নীতিবাজ সিএসএস কর্মীদের ব্যাপারে সতর্ক করার পাশাপাশি  বিদ্যুৎ সংক্রান্ত যেকোন সমস্যা সমাধান এবং সেবা পেতে সরাসরি সংশ্লিষ্ট এনওসিএস দপ্তরে, হটলাইনে, ওয়েবসাইটে এবং স্পেশাল টাস্কফোর্সের দপ্তরে যোগাযোগ করতে উৎসাহিত করা হয়। উল্লেখ্য, স্পেশাল টাস্কফোর্স টিম বিদ্যুতের অনিয়ম প্রতিরোধে পেশাগত দক্ষতা, কার্যকরী পদক্ষেপ এবং স্বচ্ছ কর্মপদ্ধতি নিশ্চিতকরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার ফলে গ্রাহক এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট গ্রহনযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য টিম হিসেবে আস্থা অর্জন করেছে।  

কোম্পানি সচিবের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের জজ কোর্ট, শ্রম আপীল ট্রাইবুন্যাল ও শ্রম আদালতে দায়েরকৃত মামলাসমূহ সঠিকভাবে পরিচালনাসহ স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট আদালতসমূহের (বিদ্যুৎ আদালত) বিষয়েও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যার ফলে সাবস্টেশন নির্মাণ ও ট্রান্সফরমার ক্রয়ে মামলাসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের মাধ্যমে ডিপিডিসির বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করে রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে। যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের ফলে বকেয়া ও পেনাল বিলসহ প্রায় ৮ কোটি টাকা আদায় সম্ভব হয়েছে।

এছাড়াও মিটার টেম্পারিং সংক্রান্ত বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা পেনাল বিল আদায় করা সম্ভব হয়েছে। কামরাঙ্গীরচর উপকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে ক্ষতিপূরণ প্রদান সংক্রান্তে রিট পিটিশনের ধারাবহিকতায় রায়ের মাধ্যমে প্রায় ৯ কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব হয়েছে।

করোনাকালীন সময়ে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎবিল সমন্বয় করা হয়েছে এবং মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পের দীর্ঘদিনের বকেয়া বিদ্যুৎবিল আদায়ে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দায়িত্বশীলতার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সফলতা এসেছে। এছাড়াও কেস ম্যানেজমেন্ট ও মনিটরিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডিপিডিসি’র সকল মামলার তথ্য নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করার কারণে মামলা সংক্রান্ত বিষয়াদিতে এখন শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। 

বিলুপ্ত ডেসা নামক এক সেল দীর্ঘদিন ধরে চলমান ছিল যেখানে ডেসা আমলের বেশ বিছু সংখ্যক কর্মরর্তা-কর্মচারীদের বেতন, পেনশন ইত্যাদি বিষয়ে প্রায়শই ঝামেলা পোহাতে হতো ও তাদের আত্মীকরণ নিয়ে আইনগত জটিলতা ছিল। বর্তমান কোম্পানি সচিব তার দূরদর্শিতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুপরিশসহ একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন এবং তা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করলে সে মোতাবেক মন্ত্রণালয় বিলুপ্ত ডেসা সেলকে একবারেই বিলুপ্ত করার নির্দেশনা প্রদান করে। একই সাথে এর ধারাবহিকতায় সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল মোকবিলা করে ডিপিডিসির পক্ষে রায় আনা সম্ভব হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ দিনের জটিলতা নিরসন হয় যা একটি কোম্পানরি গুড গভর্নেন্স এ ভূমিকা রেখেছে। 

ডিপিডিসিতে প্রথমবারের মতো কম খরচে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে ঢাকার স্বনামধন্য ৫টি হাসপাতাল (ল্যাব এইড, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল, ইউনাইটেড হসপিটাল, এভার কেয়ার ও আসগর আলী) এর সাথে চুক্তি করা হয়েছে। ডিপিডিসিতে প্রথমবারের মতো মেডিক্যাল মেনেজমেন্ট সিস্টেমসহ ড্যাশ বোর্ড আপগ্রেড করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষিত থাকছে যার মাধ্যমে রোগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রোগের ইতিহাস, রোগাক্রান্তের প্যাটার্ন জেনে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে। যা আগে কখনও ছিল না। সব কর্মচারীদের ব্লাড স্ক্রিনিং করা হয়েছে আইসিডিডিআর’বির সহায়তায় যা ছিল ডিপিডিসিতে প্রথম।
 
করোনাকালে ডিপিডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। কারণ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুস্থ্য রাখার কোন বিকল্প ছিল না। তাই লকডাউনের সময় স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে ডাক্তারদের সাথে নিয়ে দায়িত্ব পালন করে সকল ধরনের সুরক্ষাপ্রদানসহ ভ্যাকসিন প্রদান নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও করোনায় আক্রান্ত ও নিহতের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে। এমনকি করোনা আক্রান্তদের আরটিপিসিআর টেস্ট ফ্রি করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ডিপিডিসির চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঠিক দিকনির্দেশনা ও তত্ত্ববধান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয়ের উৎসাহ ও আকুণ্ঠ সহযোগিতা ছাড়া এসব উদ্যেগের সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না। 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত