জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ার পেছনে যাদের অবদান রয়েছে তাদের মধ্যে আচার্য শ্রীদীনেশচন্দ্র সেন অন্যতম। বাঙালিদের দেশের প্রতি ভালোবাসা তৈরি এবং দেশের প্রতি সচেতনতা সৃষ্টিতে মৈমনসিংহ-গীতিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটির প্রকাশের শতবর্ষ উদ্যাপন করতে পেরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় গর্বিত।’
তিনি আজ বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক ভবনের ভার্চুয়াল কনফারেন্স কক্ষে শ্রীদীনেশচন্দ্র সেন সংকলিত মৈমনসিংহ-গীতিকার শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যের শুরুতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শাহাদাৎ বরণকারীদের এবং ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে মহান শহীদদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘এখন অনেকে বিদেশে যেতে চায়। যারা বিদেশে যেতে চায় তারা এদেশের চেয়ে বিদেশকে অনেক উন্নত ও সবদিক থেকে ভালো ভেবে যায়। কিন্তু বিদেশে গিয়ে তারা বিদেশি সংস্কৃতিকে ধারণ করতে পারে না। তারা তৈরি করে আলাদা একটি সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী।’
ড. সৌমিত্র শেখর আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে সবকিছু ছিল। আর ছিল বলেই ব্রিটিশ উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল। এদেশের মাটি খুঁড়লেই ওয়ারী বটেশ্বর, পাহাড়পুর, নালন্দা পাওয়া যায় কিন্তু বিদেশের অনেক দেশেই মাটি খুঁড়লে কিছুই পাওয়া যাবে না। ইংরেজদের সাম্রাজ্য একদিনে ধ্বংস হয় নি। মৈমনসিংহ-গীতিকা ইংরেজদের সাম্রাজ্য ধ্বংস করতে সাহায্য করেছে। এদেশের তরুণ সমাজের জন্য মৈমনসিংহ-গীতিকা একটি আলোর দ্যুতি বলে উল্লেখ করে মাননীয় উপাচার্য বলেন, মৈমনসিংহ-গীতিকা পড়তে হবে এবং মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে একটি সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা নিতে হবে। আমাদের অতীত অত্যন্ত উজ্জ্বল ছিল সেই উজ্জ্বলতাকে ফিরিয়ে আনাই হবে মৈমনসিংহ-গীতিকার শতবর্ষ উদ্যাপনের মূল প্রেরণা।
মৈমনসিংহ গীতিকা শতবর্ষ উদ্যাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. আহমেদুল বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সম্মানীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আচার্য দীনেশন্দ্র সেন রিসার্স সেন্টারের পরিচালক ও আচার্য শ্রীদীনেশন্দ্র সেনের প্রপৌত্রী অধ্যাপক দেবকন্যা সেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান।
আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন মৈমনসিংহ গীতিকা শতবর্ষ সংখ্যা ‘জলদ’ এর সম্পাদক স্বপন ধর, স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ন কবীর, অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হানা আক্তার।
আলোচনা সভার শুরুতে অনুষ্ঠানের লোগো উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর । পরে মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর সম্পাদিত মৈমনসিংহ-গীতিকা শতবর্ষ-প্রকাশনা গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সঙ্গীত বিভাগ ও থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা এসময় একটি পালা উপস্থাপন করে।
আলোচনা সভা শেষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আচার্য দীনেশন্দ্র সেন রিসার্স সেন্টারের পরিচালক ও আচার্য শ্রীদীনেশচন্দ্র সেনের প্রপৌত্রী অধ্যাপক দেবকন্যা সেনের সভাপতিত্বে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে ‘মৈমনসিংহ গীতিকা ও ম্যাজিক রিয়ালিজম: প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিল্পরীতির তুলনামূলক আলোচনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা নাজ স্বর্ণ প্রভা। `Tale of Religious Coexistence: A Critical Analysis of Maimansingh Gitiaka’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লিভা হক।
মৈমনসিংহ গীতিকায় ‘লোক উপাদান’: কনটেক্সটচুয়াল এপ্রোচ পর্যালোচনা শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী আতিভা ইভা। সেমিনারে পাঠকৃত তিনটি প্রবন্ধের আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. উপল তালুকদার।