মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫ ৯ বৈশাখ ১৪৩২
মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫
ঘাটতি ৩২৯ মেট্রিক টন চাল, নিখোঁজ গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
ময়মনসিংহ ব্যুরো
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩, ৩:১৮ PM
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা সরকারী খাদ্য গুদামের অনিয়ম নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি গুদামের মজুদ যাচাই করে ৩২৯ মেট্রিক টন চাল ঘাটতি পেয়েছে। এনিয়ে বদলি আদেশের পর গুদামের চাবি নিয়ে উধাও হওয়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে মুক্তাগাছা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২১ নভেম্বর মঙ্গলবার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা রুবী বাদি হয়ে মুক্তাগাছা থানায় মামলা দায়ের করেন। আলোচিত এ ঘটনায় গুদামের সেই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ওসি এলএসডি শাকিলের অনিয়ম নিয়ে গত ১৫ অক্টোবার ‘ চাবি নিয়ে উদাও মুক্তাগাছা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা, ৪০০ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতির শঙ্কা, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দৈনিক সংবাদে বিস্তারিত খবর প্রকাশিত হয়।

গত ১০ অক্টোবর মুক্তাগাছা উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ এর বদলির আদেশ হয়। ১২ অক্টোবর তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সাইফুল ইসলামকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা না করে ১৭ অক্টোবর থেকে গুদামের চাবি নিয়ে গাঁ ঢাকা দেন। এঘটনায় গুদামে চাল ঘাটতি রয়েছে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এমন সন্দেহে ২২ অক্টোবর গঠন করা হয় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। তখন জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে গুদামের তালা ভেঙ্গে দীর্ঘ প্রায় একমাস তদন্ত কমিটি বাস্তব মজুদ যাচাই করেন। এতে ৩২৮ মেট্রিক টন ৯৮০ কেজি চাল ঘাটতি পান। এসময় খামালে বিশেষভাবে রক্ষিত ৯ হাজার ৯৭১টি খালি বস্তা পান। খাটতিকৃত চালের সরকারীভাবে বাজার মূল্য ১ কোটি ৭০ লাখ ৭ হাজার ২২৮ টাকা বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। ৩০ কেজি চালের খালি বস্তার ঘাটতি ১১ হাজার ৪৬৬টি এবং ৫০ কেজি চালের খালি বস্তার ঘাটতি ৩৮০টি যার বাজার মূল্য ৭ লাখ ২৫ হাজার ৯৬০ টাকা। 

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, শাকিল আহমেদ মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামে যোগদানের পর থেকেই রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে স্থানীয় একজন ধান-চাল ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। এদের মাধ্যমে কাগজে কলমে ধান চাল ক্রয় দেখিয়ে আবার একই প্রক্রিয়ায় টিআর, কাবিখা, ভিজিডি, ভিজিএফ বিতরণ দেখিয়ে ব্যাপক অনিয়ম করাটা তার জন্য স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হয়ে দাড়িয়ে ছিল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতাদের একটি চক্র তার সাথে যোগসাজসে কাজ করতো বলে সূত্রটি জানায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিজের চাকুরির বেতনভাতা নানা উঠিয়েও জমিদারী স্টাইলে চলতেন বলে একাধিক ধান-চাল ব্যবসায়ী জানান। সব জেনেও প্রভাবশালী মহলের ভয়ে তার উর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা তাকে কিছুই বলার সাহস পেতেন না। এর আগেও একবার শাকিলের বদলির আদেশ হলে তিনি নতুন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে চাবি নিয়ে পালিয়ে ছিলেন। তখন তিনি প্রায় দুই সপ্তাহের তদবিরে কৌশলে তার বদলির আদেশ প্রত্যাহার করিয়ে একই স্টেশনে থেকে যান। মুক্তাগাছায় যোগদানের পর থেকেই তিনি নিজেকে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে দাপট নিয়ে চলতেন। ইতোপূর্বেও একাধিকবার খাদ্য ঘাটতিসহ, রাতের আধারে নিম্নমানের চাল গুদামে ঢুকানো, গুদাম থেকে নেয়া খাদ্যবন্ধব কর্মসূচির চালের বস্তায় ওজন ঘাটতিসহ নানা অনিয়ম ধরা পড়লেও তিনি সহজেই পার পেয়ে যান। সবশেষ এবারও তিনি বদলির আদেশ প্রত্যারের চেষ্টায় চাবি নিয়ে পালিয়ে যান। তবে এবার তিনি ধরা পড়ে যান। 

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদের বলেন, যোগদান করেই এ ঘটনার সম্মুখীন হই। মুক্তাগাছা উপজেলা খাদ্য গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ তার দায়িত্ব হস্তান্তর না করে গা ঢাকা দেওয়ায় সন্দেহের সৃষ্টি হলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি গুদামটিতে ৩ হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন চাল মজুদের মধ্যে ৩২৮ মেট্রিক টন ৯৮০ কেজি চাল ঘাটতি পায়। এছাড়াও ৩০ কেজি এবং ৫০ কেজি চালের খালি বস্তা ১১ হাজার ৮৪৬টি ঘাটতি পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে গুদাম কর্মকর্তা ১ কোটি ৭৭ লাখ ৯৮ হাজার ২৪১ টাকার দুর্নীতি করেছে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় বাদী হয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা রুবী ফৌজদারী আইনে শাকিলের নামে একটি মামলা দায়ের করেছে। শাকিলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি দুদকও তদন্ত করছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে। অনিয়ম করে কেউ আইনের ফাঁকফোকরে বেরিয়ে যাবে তার সুযোগ নেই।  

ময়মনসিংহ আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামে মজুদকৃত চালের ঘাটতি পাওয়ায় একটি ফৌজদারী মামলা করা হয়েছে সাবেক গুদাম কর্মকর্তা শাকিলের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে নতুন ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা হিসেবে সাইফুল ইসলামকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। শাকিলের বিরুদ্ধে অচিরেই বিভাগীয় মামলা হবে। পরে সেই মামলার তদন্তে অন্য কারও দায় আছে কি না তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চাকরী অনুযায়ী সরকার প্রত্যেককে সকল ধরণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে। তারপরেও যারা অনিয়ম দুর্নীতি করছে বা করবে তাদের কোন ভাবেই ছাড় নয়। মুক্তাগাছার বিষয়টির পরপরেই প্রত্যেক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে সতর্ক করা হয়েছে এসব বিষয়ে তৎপর থাকার জন্য।

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় একজন ধানচাল ব্যবসায়ী যিনি রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে বর্তমান সরকারের শেষ পাঁচ বছরে হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। তার নেতৃত্বেই মূলত খাদ্যগুদামের কোটি কোটি টাকার অনিয়ম সংগঠিত হত। তাকে ধরলেই খাদ্য গুদামের সকল অনিয়মের পাশাপাশি এই অঞ্চলের ধান-চালের বাজারসহ নানা খাদ্যদ্রব্য নিয়ে বৃহৎ অনিয়মের বহু ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

মুক্তাগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল মজিদ বলেন, চাল আত্মসাতের অভিযোগ গত ২১ নভেম্বর সাবেক গুদাম কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ এর বিরুদ্ধে ৪০৯ ধারায় একটি মামলা করা হয়েছে। মামলাটি দুদক তদন্ত করছে। আসামীকে গ্রেপ্তারে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত