পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের প্রতিটা কোনায় যার পদচারনা তিনি হলেন নিলুফার ইয়াসমিন খুব অল্প বয়সে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। তার পরিবার ছিল কৃষি নির্ভর এবং বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি ও ছিল কৃষি নির্ভর। তাই জন্ম সূত্রে তিনি ছিলেন কৃষক। বিয়ের পর তিনি ঘরের কাজ সামলে কৃষি কাজে নিজেকে দক্ষ করে তোলে। নিলুফা তার এলাকার নারীদের সম্পৃক্ত করে তাদের কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধ করেন। পাশাপাশি তিনি সামাজিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে থাকে এবং কৃষি কাজের সাথে জড়িত নারীদের পরামর্শ দেন যেমন কিভাবে রোপন করতে হবে, আর্থিক অনুদান কিভাবে সংগ্রহ করে কাজে লাগাতে হবে এ বিষয় তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তিনি তার এলাকার মধ্যে সালিশ ব্যবস্থায় অংশগ্রহন করতেন বিশেষ করে পারিবারিক বিবাদ বা স্বামী স্ত্রী কলহো। এখানে তিনি দেখতে পান সালিশি ব্যবস্থায় একটা বৈষম্য রয়েছে। নারীর তুলনায় পুরুষের প্রাধাণ্য দেওয়া হতো বেশি । নারীর কথার কোন মূল্যায়ন করা হতো না এবং নারীরা বেশির ভাগ সময় সঠিক ন্যায্য বিচার পেতনা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন নারী পুরুষের এই বৈষম্যকে ভাঙ্গতে হবে নারী পুরুষের প্রকৃত পরিবর্তন হতে গেলে সমতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাই তিনি নারীদের সঠিক বিচারের দাবিতে নারীর পক্ষে হয়ে কথা বলা শুরু করেন এবং পারিবারিক বিবাদ মিমাংসায় নারী পুরুষ উভয়ের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে শুনতে হবে সে বিষয় দাবি তোলেন।
নিলুফার ইয়াসমিন যখন রাজনৈতিক দলে পদে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তাবিত হয়ে ছিলেন তখন তিনি বুঝতে পেয়ে ছিলেন রাজনীতিতে নারীদের সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন । ইউনিয়ন পর্যায়ে জনগনের প্রত্যাশা ছিল নিলুফার ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন অংশগ্রহনের মধ্যে দিয়ে জনগনের সেবা প্রদান করেন। কিন্তু তিনি সেটা কখনো চাননি। তিনি চেয়েছিলেন নির্বাচন করলে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি তার মায়ের অণুপ্রেরণায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য নমিনেশন জমা দেওয়ার পর এলাকার জনগনের চিন্তা ভাবনার অভিপ্রকাশ ঘটে। বিশেষ করে পুরুষ এর মধ্যে দেখা যায় বিদ্রুপের চিত্র তারা চেয়ারম্যান হিসাবে একজন নারীকে কখনো প্রাধান্য দিতে পারবেনা । একই সাথে তিনি যখন মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে নারীদের সাথে কথা বলে সেখানে সে জানতে পারে অধিকাংশ নারীই যানেনা চেয়ারম্যান পদে একজন নারী নির্বাচন করতে পারে। নির্বাচনের ক্যাম্পেইন এর সাথে সাথে তিনি সচেতনতা কার্যক্রম ও করেছেন।
২০২১ সালে আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের সময় অপরাজিতা নেটওয়ার্ক দল মত নির্বিশেষে একজন নারী প্রতিনিধি হিসাবে নিলুফার ইয়াসমিন এর জন্য কাজ করেছেন পরামর্শ সহ সব সময় সাথে থেকেছেন। নির্বাচনে আশানুরুপ কোন ফলাফল তিনি পাননি কিন্তু তার এই হেরে যাওয়া ফলাফলের জন্য তিনি হতাশা গ্রস্থ হয়নি । তিনি আরো উদ্যেমী হয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য নিজেকে আরো দক্ষ ও যোগ্য করে তুলতে ইউনিয়নে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে । নিলুফার ইয়াসমিন তার সহযোগী রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত আছেন, ইউনিয়ন মহিলা পরিষদের ইউনিয়ন সভাপতি সহ বিভাগীয় অপরাজিতা নেটওয়ার্কের একজন সদস্য। তিনি নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করছেন। নারীর ক্ষমাতায়নে জন্য তার প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রেখে সমাজের উন্নয়ন ধারাকে আরো গতিশীল করতে কাজ করে যাচ্ছে।