স্বামীকে অপহরণ করে বর্বর নির্যাতন করে হত্যার চেষ্টার ঘটনার ১৭ দিনের মাথায় দুষ্কৃতিকারীরা এবার তুলে নিয়ে যায় মামলার বাদিকে৷ একের পর এক অপহরণ, নির্যাতন ও প্রাণনাশের চেষ্টার ঘটনায় আতঙ্কিত সানোয়ারা আবাসিক এলাকার একটি পরিবার৷ গতকাল (৭ ডিসেম্বর) রাতে আসামি পক্ষের হুমকি বিষয়ে চাঁন্দগাও থানায় জিডি করেছিলেন রিনা রহমান (জিডি নং- ৪৪৬)।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সেই হুমকিই সত্যি হলো৷ সকালে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় রিনা রহমানকে৷ দুপুরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে অনন্যা আবাসিকের একটি সবজিক্ষেত থেকে তাকে উদ্ধার করা গেলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেলের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রিনার হুঁশ ফেরেনি৷
রিনার স্বামী অছিউর রহমান জানান, আজ (৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে এগারোটায় বাজার করতে সানোয়ারা আবাসিকের গেটের উদ্দেশ্য বাসা থেকে বের হন স্ত্রী রিনা৷ জোহরের আজানের সময় পর্যন্ত স্ত্রী বাসায় না ফেরায় আশপাশে খোঁজ নিতে থাকেন তারা৷ দুপুর ১টা ২৪ মিনিটের সময় একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করে এক ব্যক্তি জানান অনন্যা আবাসিকের আর্মি ক্যাম্পের পাশের একটি ক্ষেতে আমার স্ত্রী পড়ে আছে৷ আমরা দ্রুত সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। উদ্ধারের পর স্থানীয়রা বলেছে সম্ভবত আমার স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে রাখা হয়েছিলো৷ উনাকে নিয়ে যেতে না পেরে এখানে ফেলে যায়৷ সেসময় আমার স্ত্রী মামুনের নাম বারবার বলেছে যে কিনা গত ৬ ডিসেম্বর আমাদের বাসার সামনে এসে হুমকি দিয়েছিলো৷
অছিউর রহমান আরো বলেন, আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই তুলে নিয়ে যাওয়া সন্ত্রাসীদের একজন মামলার এজাহার ভুক্ত ২নং আসামি নোমানের বড় ভাই মানুষ ইদানীং প্রায়শ আমাদের বাসার আসে পাশে দলবল নিয়ে ঘুরাঘুরি করে৷ গত ৬ নভেম্বর রাতে মামুন আমাদের বাসার পাশে অবস্থান নেয়৷ এসময় সেখানে আমার স্ত্রীকে একা পেয়ে প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে বলে, তোর স্বামীকে যেভাবে নিয়ে গেছি তোকেও সেভাবে নিয়ে যাবো। এমন হুমকি পাওয়ার পরদিনই আমার স্ত্রী বিষয়টি থানা পুলিশকে জানিয়ে একটি জিডি করেন৷ গতকাল জিডির পর বিষয়টি তদন্তের ভার আমার মামলার আইও এসআই শরীফ উদ্দিনকে দেয়া হয়৷ জিডির বিষয়টি জানাতে এসআই শরীফ উদ্দিনকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি৷ আজকে আমার স্ত্রীর ঘটনার পরো বিকেল পৌনে ৬টা পর্যন্ত মামলার আইও কিংবা থানার কোন পুলিশ হাসপাতালে আসেনি।
এই বিষয়ে চান্দগাও থানার ওসি (তদন্ত) মো. ছবেদ আলী বাংলাদেশ বুলেটিনকে জানান, রিনা রহমানের জিডির বিষয়টি এবং আজকের ঘটনার বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত। ইতিমধ্যে মামলার আইও শরীফ উদ্দিন ও আমাদের থানার মোবাইল টিমকে থানায় যাওয়ার জন্য বলেছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি৷ ঘটনার প্রায় ৪ ঘণ্টা পরো পুলিশ যা যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সংশ্লিষ্টদের যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান৷
জানা গেছে, গত ২১ নিভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টার পর একই এলাকা থেকে তিনটি ব্যাটারি চালিত রিকশা করে ৬ জনের একটি দল বেসরকারি চাকুরিজীবী আছিউর রহমানকে। এরপর তার মোবাইল থেকে ৬ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন৷ এসময় অপহরণকারীরা মুঠোফোনে অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে কথা বলে৷ অপর প্রান্ত থেকে অছিউর রহমানকে মেরে ফেলার নির্দেশ আসলে তাকে কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী একটি খালে নিয়ে যাওয়ার পথে স্থানীয় কিছু যুবক বিষয়টি দেখে ফেলে৷ নজরুল ইসলাম ও এরশাদ সহ কয়েকজন স্থানীয় যুবক অপহরণ কারীদের ধাওয়া দিলে অপহরণকারীরা অছিউরকে ফেলে পালিয়ে যায়৷ এসময় অপহরণ দলের সদস্য আলআমিনকে (১৯) হাতেনাতে ধরে ফেলে৷ এই ঘটনার ভিকটিমের স্ত্রী রিনা রহমান ৬ জনের নাম উল্লেখ করে চাঁন্দগাও থানায় একটি মামলা করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই শরীফ উদ্দিন বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, ঘটনায় এজাহার নামীয় ৫ জনকে আমরা ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছি। আসামিদের ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে৷ জিজ্ঞাসাবাদে সব কিছু বেরিয়ে আসবে বলে তিনি জানান৷