মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫ ৯ বৈশাখ ১৪৩২
মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫
মধুপুরের গড়াঞ্চলে চাষ বেড়েছে মাসকালাইয়ের
মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১:২৯ PM
টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় অঞ্চল কে আনারসের রাজধানী বলা হলেও এখানে আনারস ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার ফলমূল শাক সব্জিসহ নানা জাতের ফসল উৎপাদিত হয়। এ অঞ্চলের মাটি লালচে ছাড়াও দোঁআশ মাটির অস্তিত্ব বিদ্যমান আছে। উচুঁ এলাকায় কাকড় কণাযুক্ত আর একটু নিচু এলাকায় বেলে দোআঁশ মাটি। পাহাড়ি এলাকায় আনারস কলা পেঁপে আদা কচু হলুদসহ বিভিন্ন অর্থকরি কৃষি ফসলসহ প্রায় সব ধরনের ফসল জন্মে থাকে। গড় এলাকার মধ্যে দুই পাশে উচুর মাঝখান দিয়ে নিচু খাল বয়ে গেছে। এ নিচু এলাকাকে বাইদ বলা হয়। টিলা উচু নিচু বাইদ এসব হচ্ছে গড় এলাকা ভূমি রুপ বা ভূমি বৈচিত্র্য। মধুপুর, মুক্তাগাছার কিছু অংশ, ঘাটাইল, ধনবাড়ি, সখিপুর,ফুলবাড়িয়া, ভালুকার কিছু অংশ, গাজীপুর ও ঢাকা জেলার কিছু অংশ এবং জামালপুর জেলার দক্ষিণ পূর্ব অংশ নিয়ে মধুপুর গড় এলাকা গঠিত।

গড় এলাকায় যুগ যুগ ধরে মাসকালই চাষ হয়ে থাকে হেক্টরে হেক্টরে। এক সময় এ এলাকায় প্রচুর আড়হকালাই ও মাসকালাই চাষ হতো। সে সময়ে পানি সেচের জন্য মেশিন কম ছিল। সেচের অভাবে উচু এলাকায় সেচ বিহীন ফসল হিসেবে মাস কালাই চাষ করতো। নিচু এলাকায় ধান চাষ করতো কৃষকরা। ধীরে ধীরে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় মাসকালাই চাষ কমতে শুরু করেছে। বাড়তে থাকে বিভিন্ন জাতের অর্থকরি ফসলের চাষাবাদ।

মধুপুর ধানবাড়ি কৃষি অঞ্চলেরর কৃষকরা এক সময় মাসকালাই কে কাতি ঠাকুরি বলতো। এ কালাই বা ডাল কার্তিক মাসে বুনা হয় বলে কাতিঠাকুরি বলে অভিহিত করতো। এ অঞ্চলে মাসের ডাল অতিথি আপ্যায়নে ব্যাপক সমাদৃত ছিল। গ্রামের মানুষেরা শীতকালে মাসের ডাল বা লাউয়ের পাতা ভর্তা সুস্বাদু খাবার হিসেবে খেতো। বাড়ি বাড়ি শীতকালে মাসের ডালের সাথে কচি লাউ কেটে দিয়ে ডাল রান্না করতো। বড় কোন অনুষ্ঠান হলে আয়োজন হতো এ ডালের। ধনবাড়ি এলাকায় মাসের ডাল দিয়ে মেন্দা রান্না করা হয়। এ ডাল চাষ কমে যাওয়ার কারণে দামও বেড়ে গেছে।

তবে মধুপুর ধনবাড়ি ভুয়াপুর উপজেলার সমতল ও পাহাড়িয়া এলাকাসহ ও ধনবাড়ি ভুয়াপুর উপজেলার নিচু বেলে দোআঁশ মাটিতে ও চরাঞ্চলে মোটামুটি ভাবে মাসকালাই চাষ হয়ে থাকে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মধুপুরে এবছর ৬০ হেক্টর জমিতে মাসকালাই চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৯০ মেট্রিকটন। ধনবাড়িতে বারি-৩ জাতের মাস কালাই চাষ হয়েছে ২৫ হেক্টর। ভুয়াপরে ১২২৪ হেক্টর মাসকালাই চাষ হয়েছে।

মাসকলাই এর আবাদ কমার কারণ উল্লেখ করে ধনবাড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, খরিফ-১ মৌসুমে বেশির ভাগ জমি আমন আবাদের আওতায় থাকায় এবং উচু জমিগুলোতে সবজি চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় মাসকলাই এর আবাদ এ এলাকায় কম। তিনি জানান, ধনবাড়িতে আবাদ হয়েছে ২৫ হেক্টর বারি মাসকালাই-৩ জাতের। প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে ২৫০ জনকে। ফলন হচ্ছে বিঘাপ্রতি ২.৫ মণ। লক্ষমাত্রা ছিল ২৫ হেক্টর। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা প্রকল্পের আওতায় ৫ কৃষককে মাসকালাই চাষের প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে।

কৃষক আব্দুল মজিদ এবার মাসকালাই বাড়ি থেকেই ১৫০ টাকা প্রতিকেজি বিক্রি করেছেন। বাজারে দাম আরো বেশি বলে জানালেন তোতা মিয়া নামের আরেক কৃষক।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, মধুপুরে এ বছর ৬০ হেক্টর জমিতে মাসকালাই চাষ হয়েছে। তার উপজেলায় ২শ' জন কৃষককে এ ফসলের প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে। তারমতে, প্রনোদনার আওতায় ২শ' বিঘা চাষ হয়েছে।

এক সময় এ ফসলের চাষের মাত্রা কমে গেলেও বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন প্রনোদনা দেওয়ার কারনে এখন মাসকালা্য়ের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষক সুফল পেয়েছে এ জন্য চাষ অব্যাহত থাকবে ।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত