গাজীপুরের বখড়িয়া (চিলাই ব্রিজ) এলাকায় দুর্বৃত্তদের কেটে ফেলা রেল লাইননে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় ট্রেনটির প্রায় অর্ধেক লাইনচ্যুত হয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটলেও একজনের মৃত্যু ও ১০ জন আহত হয়েছেন। ট্রেনের গতি কম থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম। অন্যথায় ঘটতে পারতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এ দুর্ঘটনায় ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার এলাকার মুরগি ব্যবসায়ী আসলাম (৩৫) মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ভোরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের গাজীপুরের বনখড়িয়া (চিলাই নদীর) ব্রিজে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের ভাই মোকছেদুল জানান, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের লোহাই গ্রামের মোছলেম উদ্দিনের ছেলে মুরগী ব্যবসায়ী আসলাম (৩৫) নিহত হয়েছে। সে কাঁচামাল ব্যবসায়ী। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ইনচার্জ আবু ফজল জানান, ট্রেন দুর্ঘটনায় একজন নিহত ও আহত ১১ জনকে এ হাসপাতালে আনা রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৪ জন, ৭ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
আহতরা হলেন, গফরগাঁও উপজেলার লাজাল উদ্দিনের ছেলে রফিকুল মোল্লা (৩৫), একই উপজেলার সফিক মিয়ার স্ত্রী জামিনা (৩৫), কুমিল্লার জসিম উদ্দিনের মেয়ে সুরভী (১৮), গৌতম সাহার স্ত্রী রুপালি সাহা (৪০), মনির উদ্দিনের ছেলে বেলাল উদ্দিন (৪০), জসিম উদ্দিনের স্ত্রী রওশন আরা (৪২), নিজাম উদ্দিনের ছেলে জলিল (৩৮), লালু মিয়ার ভহেলে সুমন (২৫), কুদ্দুসের ছেলে সবুজ (৩২), ময়মনসিংহের ইসমাইল হোসেনের ছেলে এমদাদ (২৫), নেত্রকোনার গনু মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪০)।
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বাসিন্দা নূরুল ইসলাম জানান, রাত ১১টায় মোহনগঞ্জ থেকে ট্রেনটি ছেড়ে আসে। তিনি ওই ট্রেনে স্ত্রীকে নিয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকা আসছিলেন। গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর রেল স্টেশন পার হওয়ার পরই বিকট শব্দে ট্রেনটি কাত হয়ে পড়ে। পেছনের দিকে বগিতে ছিলেন। তখন রাত আনুমানিক সোয়া ৪টা বা সাড়ে ৪টা বাজে। এ সময় যাত্রীরা চিৎকার শুরু করলে বুঝতে পারেন ট্রেনে কিছু একটা হয়েছে। পরে জানতে পারেন, ট্রেনের ইঞ্জিন পড়ে গেছে লাইন থেকে।
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন রফিকুল ইসলাম। তিনি ইঞ্জিনের পরের বগিতেই ছিলেন। ঘন কুয়াশা থাকায় ট্রেন ধীর গতিতে চলছিল। তিনি ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ হলে তার ঘুম ভাঙ্গে। তখন দেখতে পান কয়েকটি বগি লাইন থেকে নিচু জমিতে পড়ে রয়েছে। অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে তিনিও অনেক কষ্টে জানালা দিয়ে বের হয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন।
তিনি বলেন, ধীরগতি থাকায় একজন নিহত হয়েছে। দ্রæত গতিতে ট্রেন চললে এ দুর্ঘটনায় আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটতো। ট্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যাত্রীদের তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি। সবার মুখে মুখে শুনছি ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার বাসিন্দা মুরগী ব্যবসায়ী আসলাম (৩৫)। তিনি ইঞ্জিনের সঙ্গে থাকা বগির মাঝখানে বসেছিলেন। হয়তোবা ট্রেন পড়ে গেলে তিনিও পড়ে মারা গেছেন।
অপর নারী যাত্রী কুলছুম আক্তার বলেন, মানুষ কীভাবে কাজটি করলো। ট্রেন লাইন কেটে রাখা কী করে সম্ভব? এতে আরও অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারতো। যারা এ কাজ করেছে তাদের কী আত্মীয় স্বজন, বাবা-মা ও ভাই-বোন নেই। তাদেরওতো স্বজনেরা এ ট্রেনে থাকতে পারতো। আল্লাহ তুমি রহম করো।
এদিকে, গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ-ঢাকা রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ময়মনসিংহ অঞ্চলের ট্রেনগুলো যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে ঢাকা থেকে চলাচল করতে পারে সেজন্য রুট পরিবর্তনের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ময়মনসিংহ অঞ্চলের ট্রেনগুলো ঢাকা-বিমানবন্দর-টঙ্গী-ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রেলপথে চলাচল করছে।