মাত্র এক কাপ গরম চা থেকে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা ৷ আর সেই দুর্ঘটনায় আপনার শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আমাদের প্রায় সব বাসাতেই চা পানের প্রচলন আছে। দেখা যাচ্ছে পরিবারের কারো জন্য এক কাপ গরম চা কোথাও রাখা হয়েছে৷ এমন সময় বাসার ছোট্ট শিশুটি এসে সেই চায়ের কাপ নিজের কাছে টেনে নিতে গেছে। আর তখনি গরম গরম চা ভর্তি কাপ উলটে পড়ে যায় শিশুটির গায়ে। এতে শিশুর বুকে ও পেটে গরম চা পড়ে মারাত্মক ভাবে পুড়ে যেতে পারে। যার পরিমাণ ১০ থেকে ১৫ পার্সেন্ট পর্যন্ত হতে পারে৷ আর চিকিৎসকদের মতে শিশুদের ক্ষেত্রে ১০ পার্সেন্ট বার্ণকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়৷ প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে সেটি ১৫ পার্সেন্ট।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক, বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ রফিক উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, "শিশুদের ক্ষেত্রে বার্ণ ইনজুরি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বাসা বাড়িতে অসাবধানতা বসত নানা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে শিশুরা। সামান্য এক কাপ গরম চা যদি একটি শিশুর বুকে পেটে পড়ে সেক্ষেত্রে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷"
জানা গেছে, আমাদের দেশে শীতকালে বাসায় গোসলের জন্য করা গরম পানিতে শিশু ও নারীদের ঝলসে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। দেখা গেছে, রান্নাঘর থেকে গরম পানি গোসলখানায় নিয়ে যাচ্ছে কিংবা পানি পান যোগ্য করতে ফুটিয়ে রাখা হয়েছে। এমন সময় বাসায় ছোট শিশুরা ছুটোছুটি করে গিয়ে সেখানে ধাক্কা লাগে৷ এতে করে আস্ত পাত্র ভর্তি গরম পানি পড়ে শিশুর পুরো শরীর ঝলসে যায়৷ আবার অসাবধানতা গরম পানির পাত্র হাত থেকে পড়ে নারীদের পেট থেকে পা পর্যন্ত ঝলসে যায়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে আমাদের দেশে বাসাবাড়িতে আগুন কিংবা গরম পানিতে পুড়ে যাওয়া রোগীদের সিংহভাগই নারী ও শিশু। পুরুষদের ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট কিংবা কর্মক্ষেত্রে পুড়ে যাওয়ার রোগীই বেশি থাকে।
বাসায় এমন দুর্ঘটনার পর অনেক পরিবারই ঘরোয়া চিকিৎসা কিংবা টোটকা করে থাকে৷ শিশুদের ত্বক ও শরীর এমনিতেই অনেক কোমল এই অবস্থায় যথাযথ চিকিৎসা করা না গেলে সেই ক্ষতে ইনফেকশন হতে পারে বলে জানান ডাঃ রফিক উদ্দিন আহমেদ৷ তিনি বলেন, "প্রত্যন্ত এলাকা গুলোতে এই প্রবণতা বেশী দেখা যায়৷ সেটা কমবেশি সব বয়সীদের ক্ষেত্রেই ঘটে। দিনের পর দিন বিনা চিকিৎসায় ঘরে ফেলে রাখার এক পর্যায়ে যখন রোগীর পোড়া ক্ষতে পচন ধরে যাওয়ার পর হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসে৷ তখন এসব রোগীর চিকিৎসা আরো জটিল হয়ে যায়। আমাদের এখানে এমনও রোগী ভর্তি আছে যাকে বার্ণ ইনজুরি হওয়ার ২০ দিন পর্যন্ত বাসায় রেখে নানান অপচিকিৎসা চালানো হয়। এক পর্যায়ে যখন পোড়া ক্ষত মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে৷"
আগুনে পোড়ার চিকিৎসার চেয়ে আগুন থেকে সতর্ক থাকাকেই বেশী সহজ বলে মনে করা হয়৷ সেক্ষেত্রে সচেতনতা, সতর্কতা ও অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শীতকালে সারা দেশে বিপুক পরিমাণ কম্বল, শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়৷ এমন সামাজিক কাজের পাশাপাশি যদি অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে জনগণকে সচেতন করা যায় তাহলে অগ্নিদুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষতি অনেকটাই হ্রাস পাবে বলে মনে করছে সচেতন মহল।