আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকায় নির্বাচনী মাঠ এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী দখলে রয়েছে।
তবে, নির্বাচনী মাঠে অন্যান্য প্রার্থীদেরকে তেমন চোখে পড়ছে না বলে স্থানীয় ভোটাররা বলছেন। পাড়া-মহল্লায় নেই তেমন প্রচার-প্রচারণা। অতীতে নির্বাচন আসলেই চায়ের দোকানে যে আমেজ দেখা যেত বর্তমানে তেমন কোন আমেজ দেখা যাচ্ছে না বলে স্থানীয়রা বলছেন। মানিকগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন মাহমুদ ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তিনি প্রতীক পাওয়ার পরে থেকে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন প্রত্যান্ত অঞ্চল চষে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া, তিনি ব্যাপক গণসংযোগ ও নির্বাচনী জনসভা করছেন। ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
জানা গেছে, শিবালয়-ঘিওর-দৌলতপুর এই তিন উপজেলা নিয়ে মানিকগঞ্জ-১ আসন গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩৭ হাজার। আওয়ামীলীগের প্রার্থী প্রত্যাহারের পরে এ আসনে যে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করছেন তারা হলেন: মোনায়েম খান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিএনএম (নোঙ্গর), মোহাম্মদ শাহজাহান খান গণফ্রন্ট (মাছ), মোহা: জহিরুল আলম রুবেল জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) ও সালাউদ্দিন মাহমুদ স্বতন্ত্র (ঈগল)।
আরও জানা গেছে, এই আসনটি বিএনপি’র ঘাটি হিসেবে পরিচিত ছিল। গত ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চীপ হুইপ প্রয়াত খন্দকার দেলোয়ার হোসেন পর পর তিনবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল হক আ’লীগে থেকে মনোনয়ন পেয়েস নৌকা মার্কা নিয়ে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিএনপির পতন ঘটান। পরে এ আসনটি আ’লীগের দখলে চলে যায়। ২০১৩ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে পর পর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এএম নাঈমুর রহমান দূর্জয়। এবারের ২০২৪ এর নির্বাচনে তাকে বাদ দিয়ে জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আব্দুস সালামকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি মনোনয়ন পাওয়ার পরে বেশ জমে উঠেছিল নির্বাচনী মাঠ। আ’লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর গণসংযোগ ও উঠান বৈঠকে মুখোরিত হয়ে উঠেছিল পাড়া-মহল্লা। এরমধ্যে জাতীয় পার্টির আসন ভাগাভাগিতে মানিকগঞ্জ-১ আসন জাতীয় পার্টির ভাগে পড়লে নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামকে এ আসন থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। জাতীয় পার্টির মোহা: জহিরুল আলম রুবেলকে এ আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি এ আসনের জন্য একেবারেই নতুন মুখ। তাকে কোন দিন দেখেনি এ এলাকার ভোটাররা। প্রতীক বরাদ্দের আজ তিনদিন অতিবাহিত হলেও তাকে কিংবা তার কোন সমর্থনের লোক ভোট চাওয়ার জন্য আসিনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা। এক মাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন মাহমুদ ছাড়া বাকী যে তিনজন রয়েছেন তারা সকলেই এ এলাকার জন্য অপরিচিত। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনায় তেমন দেখা যাচ্ছে না তাদেরকে। ফলে এবার আমেজ ছাড়া চলছে মানিকগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচন।
মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আনায়ারুল হক বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদিনের জন্ম দৌলতপুরের প্রত্যান্ত অঞ্চলে। তিনি নিজে বাড়ি করেছেন ঘিওরে। তার মামার বাড়ি শিবালয় উপজেলার প্রভাবশালী একটি পরিবারে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে অন্যান্য প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনাই বেশী। তাছাড়া অত্র আসনে শক্তিশালি কোন প্রার্থী না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীকেই এগিয়ে রেখেছেন তিনি।
শিবালয় উপজেলা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এবং টানা চারবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মানিকগঞ্জ-১ আসনটি বরাবরই বিএনপির ঘাটি ছিল। ওয়ান ইলেভেনের পরে ২০০৮ সালে ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল হকের নিকট প্রয়াত চীপ হুইপ খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন হেরে গেলে আসনটি আ’লীগের দখলে চলে যায়। এখন পর্যন্ত আসনটি আ’লীগের দখলেই আছে। চলতি নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থী এডভোকেট আব্দুস সালমকে প্রত্যাহার করা হলে এখানে এবার নির্বাচনী আমেজ কমে গেছে। তাছাড়াও জোটের প্রার্থীসহ যে চার জন প্রার্থী বর্তমানে প্রতিদ্বন্দি¦তা করছেন তাদের মধ্যে একজন ছাড়া তিনজনকেই সাধারণ জনগণ চিনেনা। এর আগে বর্তমানের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া অন্যদেরকে কখনোই ভোটের মাঠে দেখা যায়নি।
শিবালয় বন্দর ব্যাবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমবায় সমিতির সহসভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর নির্বাচনী আমেজ নেই বললেই চলে। একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণ দেখা যাচ্ছে। এছাড়া প্রতীক বরাদ্দের পরেও জোটের প্রার্থীসহ অন্যান্য প্রার্থীদেরকে মাঠে দেখা যাচ্ছেনা বলে তিনি জানান।