আবেগপ্রবণ হয়ে মানসিক জোর বাড়াতে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত এসে যদি আবার ভোটকেন্দ্র দখল করে, আগুন লাগাতে চায়, তাদের ধরবেন, হাত-পা ভেঙে দেবেন- এটা আমার আবেগ থেকে বলা। যদি আবেগ কাজ না করত, তাহলে এ কথা আমি বলতাম না।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি-জামায়াতের কোনো কর্মীকে নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া গেলে তাদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সভা করার অভিযোগে বাহারকে ১৯ ডিসেম্বর পৃথক শোকজ করা হয়।
প্রার্থী হিসেবে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার কথা বলতে পারেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে এমপি বাহার বলেন, যেদিন আমি বক্তৃতা দিই, তার ঠিক আগের দিন একজন রিকশাওয়ালা মারা যান। পত্রিকায় আমি এভাবে পেয়েছিলাম- একজন রিকশাওয়ালা তার সন্তানদের লেখাপড়া করান। তিনি সেদিন একটি গ্যারেজে ঘুমিয়েছিলেন। সেখানে আগুন দেওয়া হয়। কারণ তারা (বিএনপি) নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর দুদিন হাসপাতালে কষ্ট পেয়ে তিনি মারা যান।
ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্য বলেন, ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। একজন নারী ও একটি শিশু মারা গেছে। এগুলো আমাকে মানসিকভাবে যন্ত্রণা দিয়েছে। যারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়, তাদের বিষয়ে বলেছিলাম। তারা তো প্রতিহতের নামে মানুষ হত্যায় লিপ্ত। ২০১৪ সালে তারা চার থেকে পাঁচশ ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল। যাতে ওই কাজগুলো তারা না করতে পারে, সে জন্য মানসিক জোর বাড়াতে এমন কথা বলেছিলাম।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আমার রাজনৈতিক বক্তৃতা ছিল। যদি নির্বাচনী আচরণবিধির ভেতরে না পড়তাম, তাহলে এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু আমি এত বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম, মনে হয়েছে কীসের রাজনীতি আমরা করি, মানুষ হত্যার রাজনীতি করি? আমরা তো প্রোগ্রাম করি, আমরা তো মানুষ হত্যার রাজনীতি করি না।
বাহার বলেন, আমি তো মুক্তিযোদ্ধা। একটি থানা দখল করেছিলাম। ৫২টি মেয়েকে সেখান থেকে উদ্ধার করি। তখনই উপলব্ধি করতাম, কখন দেশ স্বাধীন হবে, আর আমাদের মেয়েরা নিরাপত্তা পাবেন। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের নারীরা নিরাপদ নন। ট্রেনে উঠলে সেই ট্রেনের বগিতে আগুন লাগিয়ে দেয়, শিশুসহ নারী মারা যান। এ কারণেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম।
আপনার আসনে একজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৭১ টিভির কুমিল্লা প্রতিনিধি নিরপেক্ষ না থেকে আমার বিপক্ষে খণ্ডিত নিউজ দিচ্ছেন। আমি তাকে বলেছিলাম, দয়া করে আমার নিউজ দেওয়া লাগবে না আপনার। এটা কি বলা অপরাধ হয়ে গেছে? খণ্ডিত নিউজ দিয়ে আমাকে বিব্রত করবেন না, এটি বলার অধিকার আমার নেই?
একাধিকবার শোকজ করা হয়েছে আপনাকে। বারবার কেন আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আচরণবিধি লঙ্ঘন করছি না। আমাকে যেই চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেই চিঠি আচরণবিধিতে চলে না। আমাকে কী সাজা দেওয়া হবে, তা জানতে এসেছিলাম। সেই ব্যাখ্যা জানতে এসেছিলাম। কারণ আমি তো আইনজীবী নই।
১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর এক উঠান বৈঠকে এমপি বাহার বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট। হেরে যাবে বলে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। বিএনপি-জামায়াতের কোনো কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া গেলে তার হাত-ঠ্যাং (পা) ভেঙে দেবেন আপনারা। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। কোনো ভয়ের কারণ নেই। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাবে কুমিল্লার মানুষ।